মেহেরপুর বিসিক শিল্পনগরীতে গত ১৯ বছরে মাত্র ৭টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এখানে ৬৪টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও অধিকাংশ এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেন, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, গ্যাস সংযোগের অভাব, সীমানা প্রাচীর ও নিরাপত্তার ঘাটতি, বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট স্থান না থাকা, দক্ষ জনবল ও ঋণ সুবিধার অভাবে শিল্পায়ন থেমে গেছে। বিসিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে মেহেরপুরে বিসিক কার্যক্রম শুরু হয়। তখন উদ্যোক্তা তৈরি, ঋণ বিতরণ এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু ছিল। পরে ২০০৬ সালে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের খড়ের মাঠ এলাকায় ১০ একর জমিতে বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করা হয়।
২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতি শতক জমির দাম ছিল ২১ হাজার টাকা। ওই সময় ৭০টি প্লটের মধ্যে ৬৪টি প্লট ৩১ জন উদ্যোক্তার মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে জমির দাম পাঁচ গুণ বেড়ে ১ লাখ ৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলে নতুন উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কমে যায়। উদ্যোক্তারা মনে করেন, মেহেরপুরের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বিসিককে উদ্যোগী হতে হবে। গ্যাস সংযোগ ও অবকাঠামোগত সহায়তা না দিলে শিল্পনগরী থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয়।
প্লট মালিক অঞ্চল ভট্টাচার্য বলেন, অধিকাংশ প্লটে এখনও কারখানা গড়ে ওঠেনি। বড় ব্যবসায়ীরা প্লট নিয়ে রেখেছেন। গ্যাস সংযোগ, ড্রেনেজ ও নিরাপত্তা না থাকায় কাজ শুরু করতে পারছি না। বারবার বিসিক অফিসে গিয়েও অগ্রগতি খুব ধীর। অন্য উদ্যোক্তা মুজাহিদ বলেন, “আমরা নিজ উদ্যোগে উৎপাদন শুরু করেছি, কিন্তু বাজার না থাকায় টিকে থাকা কঠিন। বিসিকের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা পাইনি। ঋণ সুবিধার কোনো খবরও নেই।” নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, “সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে শিল্পনগরী তৈরি করেছে, কিন্তু এখন এটি প্রায় পরিত্যক্ত। যদি প্রকল্পটি সঠিকভাবে চালু হতো, শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হতো।”
বাংলাদেশ জাতীয় ক্ষুদ্র কুটির শিল্প প্লট মালিক সমিতির মেহেরপুর জেলা সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম কালু বলেন, ক্ষুদ্র শিল্প বিকাশে বিসিকের সহযোগিতা প্রয়োজন। কিন্তু তারা কার্যত নিষ্ক্রিয়। ব্যাংকগুলোও এসএমই ঋণ দিতে আগ্রহী নয়। ফলে উদ্যোক্তারা বিপাকে পড়ছেন।
মেহেরপুর বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক পার্থ সারথি সরকার বলেন, যেসব উদ্যোক্তা এখনও কাজ শুরু করেননি, তাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কারখানা স্থাপন করতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি শিল্পনগরী ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু না করলে বরাদ্দ বাতিল করা হবে।

