চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট আগামী মাসে সংশোধনের পরিকল্পনা নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে তারা। নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী ফেব্রুয়ারিতে গঠিত সরকার যাতে নিজস্ব রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও অগ্রাধিকার অনুযায়ী বাজেট সংশোধন করতে পারে, সে জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার (১০ নভেম্বর) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সরকারের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল এবং বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে আগামী ২০২৬–২৭ অর্থবছরের জন্য প্রায় সাড়ে আট লাখ কোটি টাকার ব্যয়ের প্রাথমিক প্রাক্কলন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নতুন বাজেট চূড়ান্ত করবে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার।
চলতি অর্থবছরে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের এটি ছিল প্রথম বৈঠক। সভাটি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা।
সভায় বাজেট সংশোধনের সিদ্ধান্ত না হলেও মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন সংশোধন করা হয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যা বাড়িয়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হওয়ায় প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমানো হয়েছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী ২০২৬–২৭ অর্থবছরের জন্য ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি এবং ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন দিয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের বেশি।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত ডিসেম্বরেই কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের প্রথম সভা হয়। এ সভায় রাজস্ব আহরণ, এডিপি বাস্তবায়ন, রপ্তানি–রেমিট্যান্স প্রবাহ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর জানুয়ারিতে সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত হয়। কিন্তু এবার নির্বাচনের কারণে প্রক্রিয়াটি ভিন্ন হবে। সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করা হবে নতুন সরকার গঠনের পর।
সভায় অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার কমে যাওয়া এবং বিনিয়োগ–কর্মসংস্থানের ধীরগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কয়েকজন উপদেষ্টা। তারা বাজেট ঘাটতি সীমিত রেখে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো ও এডিপি বাস্তবায়নে গতি আনতে পরামর্শ দেন।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক কারণে আগামী কয়েক মাসেও এডিপি বাস্তবায়নের গতি মন্থর থাকবে। ধারণা করা হচ্ছে, সংশোধিত বাজেটে এডিপি থেকে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কমানো হতে পারে। তবে পরিচালন ব্যয় কমানোর সুযোগ নেই; বরং কিছুটা বাড়তে পারে।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। কর্মকর্তারা জানান, এখন বাজেট সংশোধন করলে তা নতুন সরকারের লক্ষ্য ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে না–ও মিলতে পারে। আবার বর্তমান সরকার যদি সংশোধন করে, পরে নির্বাচিত সরকারের পক্ষে তা পুনরায় পরিবর্তন করা কঠিন হবে। এ কারণেই অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বাজেট সংশোধন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

