বাংলাদেশে বিদেশি (বহুজাতিক) কোম্পানিগুলো ক্রমশ ব্যবসায়িকভাবে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। দেশীয় অধিকাংশ কোম্পানি যেখানে হোঁচট খাচ্ছে, সেখানে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে বড় বহুজাতিক কোম্পানিরা দেশীয় বাজারে তাদের পরিধি বৃদ্ধি করছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, এসব কোম্পানি তাদের অর্জিত মুনাফার বড় অংশই নিজ দেশে পাঠাচ্ছে। এমনকি লোকসান করা প্রতিষ্ঠানও বিনিয়োগের অর্থ বিদেশে স্থানান্তর করছে। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে বেরিয়ে যাচ্ছে।
বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবসায়িক চিত্র:
বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে ২০০-এর বেশি বিদেশি কোম্পানি ব্যবসা করছে। এর মধ্যে ১৩টি বড় মূলধনী কোম্পানি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এই কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সবগুলো কোম্পানির ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আলোচিত সময়ে সম্মিলিতভাবে ১৩টি কোম্পানির ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের বেশি হয়েছে। আগের দুই পূর্ণ অর্থবছরেও এই কোম্পানিগুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যবসায় উন্নতি করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর এই প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। যদিও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, তবু বিদেশি কোম্পানিগুলো ভালো ব্যবসা করেছে। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসা এবং মূল্যস্ফীতি কমে গেলে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। এতে কোম্পানিগুলোর ব্যবসার পরিধিও আরও সম্প্রসারিত হবে। তখন শুধু বিদেশি নয়, দেশীয় কোম্পানিগুলোরও ব্যবসা শক্তিশালী হবে।
সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইডিজি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিইও আলী ইমাম বলেন, “কোম্পানিগুলো সম্মিলিতভাবে ৮ শতাংশের বেশি ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। তবে এটি মূলত গত বছরের বিক্রি কম থাকার প্রভাব। প্রকৃতপক্ষে, ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। বিক্রি বাড়ার কোনো প্রকৃত কারণ নেই। বর্ধিত কাঁচামালের ব্যয়, উচ্চ পরিচালন ব্যয় এবং ক্রমবর্ধমান সুদের হার কোম্পানিগুলোর মুনাফায়ও সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে। মূল্যস্ফীতি কমলে ব্যবসা ও মুনাফা দুটোই বৃদ্ধি পাবে।”
তিন মাসে বহুজাতিক কোম্পানির আয় ও প্রবৃদ্ধি:
দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৩টি বহুজাতিক কোম্পানি হলো— গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবিসি), রবি আজিয়াটা, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস, ম্যারিকো, সিঙ্গার বাংলাদেশ, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, আরএকে সিরামিকস, রেকিট বেনকিজার, বাটা শু, লিন্ডে বাংলাদেশ এবং ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেড। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এই কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত আয় হয়েছে ১৯১.৯৬ বিলিয়ন বা ১৯ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় ছিল ১৭৭.৪৯ বিলিয়ন বা ১৭ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে আয় বেড়েছে ১৪.৪৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। শতকরা প্রবৃদ্ধি ৮.১৫ শতাংশ।
একক কোম্পানি হিসেবে সর্বোচ্চ আয় হয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর, যা ৯৪.৬৮ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানির আয় ছিল ৮৫.০৩ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। আলোচিত তিন মাসে এককভাবে আয় বেড়েছে ১১ শতাংশ। ডলার সংকটের কারণে আগের বছরগুলোতে বিদেশি কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ বহির্ভূত করতে পারেনি। এখন সংকট কিছুটা কমায় সেই অর্থ একসঙ্গে দেশে নিয়ে যাচ্ছে তারা। এছাড়া, তিন-চার বছরে টাকার অবমূল্যায়ন প্রায় ৫০ শতাংশ হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও অবমূল্যায়ন হলে লভ্যাংশের প্রকৃত মূল্য কমতে পারে। তাই কিছু কোম্পানি বেশি হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করছে।
ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় আলোচিত তিন মাসে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি হয়েছে আরএকে সিরামিকসে। কোম্পানির আয় বেড়েছে ২.০৬ বিলিয়ন বা ২০৬ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এটি ছিল ১.৩৪ বিলিয়ন বা ১৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃদ্ধি হয়েছে ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ারে, যার হার ২৫ শতাংশ। গত বছরের প্রথম তিন মাসে ৮০ কোটি টাকার ব্যবসা করা কোম্পানিটি এবার করেছে ১ বিলিয়ন টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে ম্যারিকো বাংলাদেশ। আয় বেড়েছে ২৩ শতাংশ, ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি টাকার বেশি হয়েছে।
এর পাশাপাশি বাটা শু’র আয় ১৯ শতাংশ বেড়ে ১.৮৪ বিলিয়ন, সিঙ্গার বাংলাদেশের আয় ১৫ শতাংশ বেড়ে ৪.১২ বিলিয়ন এবং রেকিট বেনকিজারের আয় ১০ শতাংশ বেড়ে ১.৪৮ বিলিয়ন হয়েছে। লিন্ডে বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস, লাফার্জহোলসিম, গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটার ব্যবসায় ১ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
ব্যবসা বাড়লেও মুনাফায় ভাটা:
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ব্যবসা বড় প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও বিভিন্ন খরচ বৃদ্ধির কারণে ১৩টি বহুজাতিক কোম্পানি ভালো মুনাফা করতে পারেনি। আলোচিত সময়ে কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত নিট মুনাফা হয়েছে ২১.৫০ বিলিয়ন বা দুই হাজার ১৫০ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ২১.৫৬ বিলিয়ন বা দুই হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে নিট মুনাফা কমেছে ৬ কোটি টাকা বা ০.২৭ শতাংশ।
এই ১৩ কোম্পানির মধ্যে ১১টির মুনাফা হয়েছে এবং দুটির লোকসান হয়েছে। ব্যবসা বাড়ার কারণে মুনাফা করা ১১ কোম্পানির মধ্যে নয়টির নিট মুনাফা সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গ্রামীণফোন ও বিএটিবিসির ব্যবসা বাড়লেও মুনাফা কমেছে। লোকসান করা দুই কোম্পানির নিট লোকসান আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় বেড়েছে। নয়টি কোম্পানি গত বছরের তুলনায় বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এগুলো হলো— গ্রামীণফোন, ম্যারিকো, লাফার্জহোলসিম, রবি, রেকিট বেনকিজার, সিঙ্গার, লিন্ডে বাংলাদেশ, আরএকে সিরামিকস ও ইউনিলিভার। এর মধ্যে সিঙ্গার ও আরএকে সিরামিকস লোকসান করেও বড় অঙ্কের লভ্যাংশ দেশ বাইরে পাঠিয়েছে।
প্রায় ৯৫ বিলিয়ন বা সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো চলতি তিন মাসে বিভিন্ন খরচ বহন শেষে মাত্র ৩.০৫ বিলিয়ন বা ৩০৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে। আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ৩.৯৭ বিলিয়ন বা ৩৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিট মুনাফা কমেছে ০.৯২ বিলিয়ন বা ৯২ কোটি টাকা। মুনাফা কমার মূল কারণ হলো ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তামাকজাত পণ্যে সরকারের বর্ধিত করারোপ। আলোচিত তিন মাসে কোম্পানিকে ভ্যাট, শুল্ক ও করবাবদ হিসাবে সরকারকে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি দিতে হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ৬,৮২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব হিসেবে সরকারকে প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা বেশি দিতে হয়েছে, যা মুনাফা কমার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
গ্রামীণফোনের নিট মুনাফা ১২.৬৯ বিলিয়ন টাকা, আগের বছরে ১৪.৬৪ বিলিয়ন টাকা। রবির মুনাফা বেড়েছে ০.৫৪ বিলিয়ন হয়ে ২.৪২ বিলিয়ন টাকা, লাফার্জহোলসিমের মুনাফা বেড়ে ১.২০ বিলিয়ন, এবং ম্যারিকো বাংলাদেশে বেড়ে ১.৫৪ বিলিয়ন টাকা হয়েছে। বার্জার, রেকিট বেনকিজার, ইউনিলিভার ও লিন্ডে বাংলাদেশের মুনাফা সামান্য বেড়েছে যথাক্রমে ০.৬০, ০.২৫, ০.২৫ ও ০.১০ বিলিয়ন টাকা। হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ও আরএকে সিরামিক আলোচিত তিন মাসে লোকসান থেকে মুনাফায় ফিরেছে। তবে সিঙ্গার বাংলাদেশ ও বাটা শু’র লোকসান বেড়েছে। সিঙ্গারের নিট লোকসান ০.৪৮ বিলিয়ন এবং বাটা শু’র ০.১৪ বিলিয়ন টাকা। বাটা শু’র লোকসানের মূল কারণ হলো বিকল্প আয় খাতে ৫ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি, পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং জমা অর্থের বিপরীতে কম সুদের আয়। ফলে আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় প্রায় তিনগুণ লোকসান হয়েছে।
কোম্পানি ও বিশ্লেষকেরা যা বলছেন:
লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের সিইও ইকবাল চৌধুরী বলেন, “অনেক কোম্পানি টিকে থাকতে প্রণোদনা দিয়ে তাদের পণ্যের বিক্রি বাড়িয়েছে। এতে ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি এসেছে, কিন্তু মুনাফা কমেছে।” তিনি সিমেন্ট শিল্পের উদাহরণ টেনে বলেন, “চাহিদার চেয়ে উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। সরকারি প্রকল্পগুলোর কাজ এক বছরের বেশি সময় ধরে ধীরগতিতে চলছে। ফলে বিক্রয় প্রচারণা এবং প্রণোদনা খরচ বেড়েছে। এই কারণে কোম্পানিগুলোর মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।”
ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শহীদুল ইসলাম বলেন, “দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কিছু লক্ষণ দেখা গেছে। কোম্পানিগুলোর বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়া তার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। তবে কোম্পানিগুলো সম্মিলিতভাবে যে ৮ শতাংশ ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে, তা মূলত গত বছরের বিক্রি কম থাকার প্রভাব। প্রকৃতপক্ষে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। তাই বিক্রি বেড়েছে বলেই মুনাফা বৃদ্ধি হয়নি। এছাড়া বর্ধিত কাঁচামালের ব্যয়, উচ্চ পরিচালন ব্যয় এবং ক্রমবর্ধমান সুদের হার মুনাফায় বাধা সৃষ্টি করেছে। মূল্যস্ফীতি কমলে কোম্পানিগুলোর ব্যবসাও বাড়বে এবং ব্যয় বহন শেষে মুনাফাতেও বৃদ্ধি আসবে।”
ইডিজি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিইও আলী ইমাম মূল্যস্ফীতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন, “বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ২০২২ সালের পর থেকে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তেমন প্রবৃদ্ধি পাচ্ছে না। এ বছর কিছুটা ভালো ব্যবসা করার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতাকে দমন করছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ না হলে বছরের শেষে কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি নাও থাকতে পারে। এছাড়া ডলার সংকটে কাঁচামাল আমদানিতে বিঘ্ন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “চলতি তিন মাসে যে ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা মূল্যস্ফীতির কারণে খুবই সামান্য। দেশে এই সময়ে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ওপরে ছিল। যদি মূল্যস্ফীতি কমে যেত এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ভালো থাকত, তাহলে কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় আরও বেশি প্রবৃদ্ধি আসতে পারত।”
লোকসান করেও নিজ দেশে অর্থ সরানো:
তালিকাভুক্ত ১৩টি বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে নয়টি কোম্পানি গত অর্থবছরে অর্জিত নিট মুনাফার চেয়ে বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এগুলো হলো— গ্রামীণফোন, ম্যারিকো, লাফার্জহোলসিম, রবি, রেকিট বেনকিজার, সিঙ্গার, লিন্ডে বাংলাদেশ, আরএকে সিরামিকস এবং ইউনিলিভার। এর মধ্যে সিঙ্গার ও আরএকে সিরামিকস লোকসান করেও বড় অঙ্কের টাকা লভ্যাংশ হিসেবে দেশ বাইরে পাঠিয়েছে।
গত অর্থবছরে ওই নয় কোম্পানি সম্মিলিতভাবে নিট মুনাফা করেছে ৮১.৬৭ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। কিন্তু লভ্যাংশ হিসেবে তারা নিয়েছে ৯৭.৯৪ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ মুনাফার চেয়ে ১৬.২৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা বেশি অর্থ তাদের দেশে স্থানান্তরিত হয়েছে। একক কোম্পানি হিসেবে তিন মাসে সর্বোচ্চ আয় হয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর, যা ৯৪.৬৮ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানির আয় ছিল ৮৫.০৩ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। আলোচিত তিন মাসে এককভাবে আয় বেড়েছে ১১ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মুনাফার চেয়েও বেশি লভ্যাংশ নেওয়া মানে এই অর্থ বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ কমানোর ইঙ্গিত। তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, ডলার সংকটের কারণে আগের বছরগুলোতে কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ নিতে পারেনি। সংকট কমায় তারা সর্বশেষ বছরে বেশি হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করে নিজ দেশে অর্থ পাঠাচ্ছে।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “ডলার সংকটের কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো আগের বছরগুলোতে লভ্যাংশ নিতে পারেনি। এখন সংকট কিছুটা কমায় সেই অর্থ একসঙ্গে নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া তিন-চার বছরে টাকার অবমূল্যায়ন প্রায় ৫০ শতাংশ হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও অবমূল্যায়ন হলে লভ্যাংশের প্রকৃত মূল্য কমতে পারে। তাই কিছু কোম্পানি বেশি হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করছে।

