ভারতের সবচেয়ে বড় শিল্পগোষ্ঠী রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ—যার মালিক এশিয়ার শীর্ষ ধনকুবের মুকেশ আম্বানি—ঘোষণা দিয়েছে যে তারা আর রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করবে না তাদের জামনগর রিফাইনিং কমপ্লেক্সের এক্সপোর্ট ইউনিটের জন্য।
গুজরাটের জামনগরে অবস্থিত এই রিফাইনারিটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক রিফাইনিং কমপ্লেক্স, যেখানে এক অংশে রপ্তানি–নির্ভর এবং আরেক অংশে দেশীয় বাজারের জন্য জ্বালানি উৎপাদন হয়।
কেন হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত?
রিলায়েন্স জানিয়েছে, এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হলো:
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা, যেখানে তৃতীয় দেশ হয়ে রুশ তেল থেকে তৈরি জ্বালানি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে আগামী ২১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মানা, যা রাশিয়ার বড় দুই তেল কোম্পানি—রসনেফট ও লুকঅইল-এর ওপর এই শুক্রবার থেকে কার্যকর হবে।
রিলায়েন্স বলেছে,
“আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়েই রূপান্তর সম্পন্ন করেছি, যাতে নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার আগেই আমরা পুরোপুরি অনুগত থাকতে পারি।”
হোয়াইট হাউস বলেছে—
“এই পরিবর্তনকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি। যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য আলোচনা আরও এগিয়ে নিতে আমরা আশাবাদী।”
রশ তেল কেনা নিয়ে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প গত আগস্টে ভারতীয় পণ্যে ৫০% শুল্ক চাপিয়ে দেন, যার মধ্যে রুশ তেল ও অস্ত্র কেনার কারণে বাড়তি ২৫% জরিমানাও ছিল। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন—ভারত রুশ তেল কিনে ইউক্রেন–যুদ্ধে মস্কোর অর্থ জোগাচ্ছে। ভারত এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
যুদ্ধ শুরুর আগে, ভারতের মোট তেল আমদানিতে রাশিয়ার অংশ ছিল মাত্র ২.৫%।২০২৪–২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৬%।
রুশ তেল আমদানিতে রিলায়েন্সই ছিল সবচেয়ে বড় ক্রেতা—ভারতের মোট রুশ তেল আমদানির প্রায় অর্ধেকই করত তারা।
গত কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক চাপে ভারতীয় রিফাইনারিগুলো রুশ তেল আমদানি কমাতে শুরু করেছে।
কার্নেগি এনডাওমেন্টের রিপোর্ট অনুযায়ী—
রিলায়েন্স ১৩% কমিয়েছে রুশ কোম্পানির তেল আমদানি
একই সময় তারা ৮৭% বেশি তেল এনেছে সৌদি আরব থেকে এবং ৩১% বেশি তেল এনেছে ইরাক থেকে
ব্লুমবার্গ জানিয়েছে—ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত রিফাইনারিগুলো ডিসেম্বর মাসের জন্য রুশ তেল কেনার চুক্তিই করেনি।
ভারত শর্ত মেটালে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত শুল্ক তুলে নেওয়া—বিশেষজ্ঞের মত
গ্লোবাল ট্রেড অ্যান্ড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (GTRI) অজয় শ্রীবাস্তব বলেছেন—
“ভারত রুশ তেল আমদানি কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। এখনই ২৫% বাড়তি শুল্ক সরিয়ে নেওয়া উচিত।”
তার মতে, শুল্ক বজায় থাকলে চলমান সূক্ষ্ম বাণিজ্য আলোচনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে রুশ তেলই ছিল যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য চুক্তির সবচেয়ে বড় বাধা।
কিন্তু রিলায়েন্সের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এবং ভারতের সামগ্রিক অবস্থান বদলের ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কিছুটা কমছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

