সরকার দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতকারীর সুরক্ষা ও জন-আস্থা বাড়ানোর জন্য ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যেই রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন করেন।
নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে পুরনো ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০’ বাতিল করে আধুনিক কাঠামোর নতুন আইন কার্যকর করা হয়েছে। এর প্রধান সুবিধা হলো, কোনো ব্যাংক অবসায়ন হলে আমানতকারীরা এখন দুই লাখ টাকা পর্যন্ত তাৎক্ষণিকভাবে পাবেন, যা আগের এক লাখ টাকার তুলনায় দ্বিগুণ।
গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স বিভাগ থেকে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ব্যাংক, কম্পানি ও ফাইন্যান্স কম্পানিতে আমানত রাখা ব্যক্তির সুরক্ষিত আমানত ফেরত দেওয়াই নতুন আইনের মূল উদ্দেশ্য। এর বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় পৃথক একটি আমানত সুরক্ষা বিভাগ গঠন করা হবে। এই বিভাগ নিয়মিত প্রিমিয়াম সংগ্রহ, তহবিল ব্যবস্থাপনা, সদস্য প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, আমানত পরিশোধ এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
নতুন আইনে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কম্পানির জন্য দুটি স্বতন্ত্র আমানত সুরক্ষা তহবিল গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো প্রদত্ত প্রিমিয়াম, জরিমানা, বিনিয়োগ আয় ও অন্যান্য অনুমোদিত উৎস থেকে তহবিল পরিচালনা করা হবে। তহবিলের প্রশাসন পরিচালনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, যা ‘ট্রাস্টি বোর্ড’ হিসেবে কাজ করবে।
আইন অনুযায়ী, নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কম্পানিকে নির্ধারিত হারে প্রারম্ভিক প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে। বিদ্যমান সব ব্যাংক কম্পানি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সদস্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে। ফাইন্যান্স কম্পানিগুলো ২০২৮ সালের ১ জুলাই থেকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ঝুঁকিভিত্তিক প্রিমিয়াম আদায়ের বিধানও রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশে সরকারি, বিদেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার আমানত কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণি হিসেবে সুরক্ষার বাইরে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আমানত ‘সুরক্ষাযোগ্য’ হিসেবে গণ্য হবে। ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কম্পানির অবসায়ন বা রেজল্যুশনের ক্ষেত্রে আমানত সুরক্ষা বিভাগ সরাসরি সুরক্ষিত আমানত পরিশোধ করবে। প্রয়োজনে রেজল্যুশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্রিজ ব্যাংক বা তৃতীয় পক্ষের কাছে সম্পদ হস্তান্তর ও আমানত সুরক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
নতুন আইন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেশি ও বিদেশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই, তথ্য বিনিময় ও কারিগরি সহযোগিতা গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে আমানত সুরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতাও দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নতুন আইন কার্যকর হলে দেশের আর্থিক খাতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্ত হবে এবং আমানতকারীরা আরও বেশি সুরক্ষা পাবেন।

