চট্টগ্রাম বন্দর চলতি বছর কার্গো, কনটেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। কর্মদক্ষতা বাড়ায় বহিঃনোঙরে জাহাজের অপেক্ষার সময়ও শূন্যে নেমে এসেছে। সোমবার (২৪ নভেম্বর) বন্দর কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৫ সালের প্রথম ১০ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫৪২ টিইইউস কনটেইনার, ১ কোটি ১৫ লাখ মেট্রিক টন কার্গো এবং ৩ হাজার ৫৫২টি জাহাজ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ, কার্গো বেড়েছে ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং বেড়েছে ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
সংখ্যায় দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর অতিরিক্ত হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩২৮ টিইইউস কনটেইনার, ১২ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন কার্গো এবং ৩৫১টি জাহাজ।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসেও এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ লাখ ১৩ হাজার ৮০৫ টিইইউস কনটেইনার, ৪৫ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন কার্গো এবং ১ হাজার ৪২২টি জাহাজ। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কনটেইনারে প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ, কার্গোতে ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং জাহাজে ১১ শতাংশ।
নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)–এর কর্মদক্ষতাও বেড়েছে। চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড পরিচালিত এ টার্মিনালে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮৭১ টিইইউস কনটেইনার ও ২৫৩টি জাহাজ। আগের বছরের তুলনায় কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
বহিঃনোঙরে ‘জিরো ওয়েটিং টাইম’
বন্দরের পরিচালন দক্ষতা বাড়ায় বহিঃনোঙরে জাহাজের অপেক্ষা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, গত সেপ্টেম্বরে ৯ দিন, অক্টোবরে ১৮ দিন এবং নভেম্বরে ১৯ দিন কোনো জাহাজকে অপেক্ষা করতে হয়নি। বন্দরে পৌঁছামাত্রই জাহাজগুলো বার্থিং সুবিধা পেয়েছে।
এতে আমদানিকারকদের পণ্য দ্রুত খালাস করা সহজ হয়েছে এবং রপ্তানিকারকরা নির্ধারিত সময়ে কনটেইনার জাহাজে তুলতে পারছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, এই সুবিধা ‘লিড টাইম’ কমিয়েছে, পণ্য খরচও কমাতে সহায়তা করছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি প্রতিযোগিতা শক্তিশালী করছে।
অগ্রগতির নেপথ্যে যা রয়েছে
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন কার্গো হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংযোজন, ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, ডিজিটাল প্রযুক্তির বিস্তৃত ব্যবহার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বন্দর ব্যবহারকারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি বৈশ্বিক শিপিং কোম্পানি মায়েরস্ক লাইনের একটি প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পরিদর্শন করে। তারা এনসিটি ও অন্যান্য টার্মিনালে জাহাজের অপেক্ষার সময় কমে আসা ও সামগ্রিক কর্মদক্ষতা দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ মনে করে, এসব অর্জন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান আরও শক্তিশালী করেছে এবং ভবিষ্যতে উন্নত বন্দর ব্যবস্থাপনার পথে এটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

