বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের পরিমাণ প্রায় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঋণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সুদ ও আসল পরিশোধের চাপ। পাঁচ বছরের ব্যবধানে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি এখন প্রায় দ্বিগুণ।
বিশ্বব্যাংকের ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেট রিপোর্ট ২০২৫’–এ এই চিত্র উঠে এসেছে। রোববার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের শেষে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়ায় ১০ হাজার ৪৪৮ কোটি ডলারে। পাঁচ বছর আগে এই অঙ্ক ছিল ৭ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলার। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালসহ বড় অবকাঠামো প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় চাপ দ্রুত বাড়ছে।
বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান দেখায়, ২০২০ সালে ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে বাংলাদেশকে দিতে হয়েছিল ৩৭৩ কোটি ডলার। ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয় ৭৩৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ পাঁচ বছরে পরিশোধের অঙ্ক প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
তবে এই সময়ে বিদেশি ঋণ ছাড় খুব বেশি বাড়েনি। ২০২৪ সালে ঋণ ছাড় হয়েছে ১ হাজার ১১০ কোটি ডলার। যা ২০২০ সালের ১ হাজার ২২ কোটি ডলার থেকে সামান্য বেশি।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, করোনা-পরবর্তী সময়ে বিদেশি ঋণ গ্রহণ এবং ঋণ পরিশোধ—দুটোই বাড়ছে। তাঁদের ব্যাখ্যায়, নতুন ঋণে গ্রেস পিরিয়ড কমে গেছে। সুদের হারও আগের তুলনায় বেড়েছে। শর্তও কঠোর হয়েছে। এতে ঋণের চাপ অর্থনীতিতে বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। এ চাপ কমাতে রপ্তানি আয় বাড়ানো এবং বৈদেশিক মুদ্রা আনে এমন প্রকল্পে ঋণের অর্থ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালে রপ্তানির তুলনায় বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯২ শতাংশ। আর মোট ঋণ পরিষেবা রপ্তানির ১৬ শতাংশ।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ওপর ঋণ পরিশোধের চাপ সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির আইডিএ থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ পায় বাংলাদেশ। আইডিএর মোট ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশই যায় বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তানে।
বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের ২৬ শতাংশ এসেছে বিশ্বব্যাংক থেকে। এরপর রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান।

