বাংলাদেশের রপ্তানিতে পণ্য ও বাজারের বৈচিত্র্য দীর্ঘদিনের বড় সমস্যা। পোশাক এখনও প্রধান পণ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারই প্রাধান্য পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নির্ভরতা কমানোর সময় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের পর এই প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে পণ্যের মান উন্নয়ন, সরবরাহ চেইনে কমপ্লায়েন্স শর্ত পূরণ এবং ব্যবসা পরিচালনা সহজ না করা হলে বৈচিত্র্য আনা সহজ হবে না।
গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দৈনিক প্রথম আলো আয়োজিত ‘রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ বিষয়গুলো আলোচিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন।
বক্তারা সরকারী নীতিসহায়তা ঘাটতি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিকূল নীতি, বন্দর-কাস্টমস সেবার দীর্ঘসূত্রতা, ব্যাংক ঋণে উচ্চ সুদের হার এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) না করার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
উত্তর হিসেবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, গত ১৬ বছরের দুর্বৃত্তায়নের ফলে দেশের অর্থনীতিতে সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ জমে গেছে, যা অনেক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের চেয়েও বেশি। তিনি বলেন, রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রে কাঁচামালের ঘাটতি নেই, বরং সমস্যা রয়েছে সেবার ব্যয়, কাস্টমস প্রক্রিয়া এবং উৎপাদন ব্যয়ে। তিনি যুক্তি দেখান, ব্যবসা সহজ করা এবং পণ্যের খরচ কমানোই মূল চাবিকাঠি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, এসএমই খাতের ওপর সরকারের সহযোগিতা কম। বৈচিত্র্য আনতে এই খাতের জন্য বড় ধরনের সমর্থন প্রয়োজন। তিনি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর এবং নতুন বাজার ও ব্র্যান্ডিংয়ে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ প্রস্তাব করেন, দেশের দূতাবাসে থাকা কমার্শিয়াল উইংগুলোকে একীভূত করে একটি স্বতন্ত্র ট্রেড প্রমোশন এজেন্সি গঠন করা উচিত।
বিডা নির্বাহী সদস্য নাহিয়ান রহমান বলেন, শুল্কভীতির এই সময়ে বৈচিত্র্য আনা অত্যন্ত জরুরি। সম্ভবনাময় পণ্য সনাক্ত করা এবং বিদেশি বাজারে প্রোমোশন দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া উচিত।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, ভিয়েতনাম যদি ৩০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করতে পারে, তাহলে আমাদের সীমাবদ্ধতা কোথায়? আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা কি আমদানিনির্ভর থাকব, নাকি রপ্তানিনির্ভর জাতি হব। তিনি সরাসরি জাহাজ চালুর মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানোর প্রস্তাবও দেন।
বার্জার পেইন্টসের রূপালী চৌধুরী এবং এইচএসবিসি বাংলাদেশের মাহবুব উর রহমান দুইজনই মনে করেন, রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনার জন্য পণ্যের মান উন্নয়ন এবং শক্তিশালী কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি।
ওষুধশিল্প সমিতির সহসভাপতি সৈয়দ এস কায়সার কবির বলেন, উদ্দোক্তাদের সম্মান দিতে হবে। পণ্য বিশ্বমানের না হলে রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনা সম্ভব নয়।
উপসংহারে, বৈচিত্র্য আনতে সরকারি নীতিমালা, প্রযুক্তি ব্যবহার, বাজার সম্প্রসারণ এবং উদ্যোক্তাদের সহায়তা—all মিলেই হবে মূল চাবিকাঠি।

