চট্টগ্রামের চা–নিলামে নতুন রেকর্ড গড়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি)। কোম্পানিটি এক নিলামেই বিক্রি করেছে ৬ কোটি ৬ লাখ টাকার চা। এটি তাদের ইতিহাসে একক নিলামে সর্বোচ্চ বিক্রি। এর আগে এক নিলামে সর্বোচ্চ বিক্রি ছিল প্রায় ৪ কোটি টাকার।
নিলামকেন্দ্রের তথ্য বলছে, ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৩১তম নিলামে এনটিসির ১২ বাগানের প্রায় আড়াই লাখ কেজি চা বিক্রি হয়। কোম্পানিটি জানায়, ৪৭ বছরে এটিই তাদের সর্বোচ্চ বিক্রি। বিক্রি বাড়ার পেছনে দু’টি কারণ সামনে এসেছে—নিলামে চায়ের গড় দাম বেড়েছে এবং চায়ের মান ভালো থাকায় পরিমাণে বিক্রিও বেশি হয়েছে। এ কারণে শুধু এক নিলাম নয়, চলতি মৌসুমে অনুষ্ঠিত ৩১টি নিলামেই গড় দাম বেশি পেয়েছে কোম্পানিটি।
নিলামে চা কেনাবেচার মধ্যস্থ প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টি ব্রোকার্সের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৩১তম নিলামে এনটিসি বাগানভেদে কেজিতে গড় দাম পেয়েছে ২৪৫ থেকে ২৪৭ টাকা। এর মধ্যে মদনমোহনপুর বাগানের চায়ের গড় দাম ছিল সর্বোচ্চ, কেজিতে ২৪৭ টাকা ৫৭ পয়সা। ওই নিলামে কালো চায়ের পাশাপাশি সবুজ চাও বিক্রি হয়েছে। সবুজ চায়ের ক্ষেত্রে এনটিসির তিন বাগানের পণ্য কেজিতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। সর্বনিম্ন দাম ছিল ১ হাজার ৩৫০ টাকা।
গড় দাম ও বিক্রির বৃদ্ধি:
চা নিলামের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫–২৬ মৌসুমে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৩১টি নিলামে এনটিসির ১২ বাগানের ২৪ লাখ ২৮ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে। গড় দাম পাওয়া গেছে কেজিতে ২৪৫ টাকা ২৬ পয়সা। আগের মৌসুমে একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ২৩ লাখ কেজি, তখন গড় দাম ছিল ১৭৮ টাকা ৫২ পয়সা। ফলে এক বছরে সোয়া লাখ কেজি বিক্রি বেড়েছে। গড় দাম বেড়েছে কেজিতে ৬৬ টাকা ৭৪ পয়সা।
দেশে প্যাকেট ও খোলা চা বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় চা মূলত নিলাম থেকেই সংগ্রহ করা হয়। তিনটি কেন্দ্র—চট্টগ্রাম, শ্রীমঙ্গল ও পঞ্চগড়ে নিলাম হয়। গত মৌসুমে দেশের মোট চা বিক্রির ৯৭ শতাংশই হয়েছে চট্টগ্রাম নিলামকেন্দ্রে।
কেন বাড়ছে নিলামের দাম?
চা উৎপাদকরা কয়েক বছর ধরে নিলামে কম দামের কারণে ধারাবাহিক লোকসানে ছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ চা সংসদ সরকারের কাছে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানায়। এরপর গত বছরের এপ্রিলে শেয়ারবাজারের মতো ‘ফ্লোরপ্রাইস’ বা ন্যূনতম নিলামমূল্য নির্ধারণ করা হয়। ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দেওয়ার পর থেকে দাম ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। চলতি মৌসুমে সর্বনিম্ন মূল্য কেজিতে ১০ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
গত ১৪ মে বাণিজ্য উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চায়ের নতুন ন্যূনতম মূল্য নির্ধারিত হয়। সেখানে উৎপাদন খরচ ধরা হয় কেজিতে ২৪৫ টাকা। সেই হিসেবে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বনিম্ন গ্রেডের চায়ের নিলামমূল্য নির্ধারণ করা হয় ২৪৫ টাকা। উত্তরাঞ্চলে বটলিফ চায়ের ন্যূনতম মূল্য ধরা হয়েছে ১৭০ টাকা কেজি।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এস এম জিয়াউল আহসান বলেন, ১২টি বাগানে মানোন্নয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় কোম্পানি এবার ভালো দাম পেয়েছে। ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের প্রভাবও নিলামে পড়েছে। ফলে চলতি মৌসুমে এনটিসির চায়ের গড় দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি পাওয়া গেছে।

