দেশের স্কুল শিক্ষার্থীদের আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করতে ধীরে ধীরে বিস্তৃত হচ্ছে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো না কোনোভাবে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় এসেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নামে খোলা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ৪৮ লাখ ছাড়িয়েছে। এসব হিসাবে জমা টাকার পরিমাণও উল্লেখযোগ্য—প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
তবে এই অগ্রগতির বিপরীতে একটি বড় বাস্তবতাও রয়েছে। দেশে মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪ লাখের বেশি। সেই হিসাবে এখনো বিশাল একটি অংশ স্কুল ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে রয়ে গেছে। এই ব্যবধান কমাতেই আর্থিক শিক্ষা সম্প্রসারণকে গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই লক্ষ্য সামনে রেখে চলতি বছর থেকেই নতুন একটি নির্দেশনা কার্যকর করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেশের প্রতিটি ব্যাংক শাখাকে অন্তত একটি নিকটবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনতে হবে। শুধু হিসাব খোলাই নয়, নিয়মিতভাবে সেখানে আর্থিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, লেনদেনের সুযোগ তৈরি এবং শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগও নিতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
কোন শাখা কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেখভাল করবে—সেই সিদ্ধান্তে যেন একাধিক ব্যাংকের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য পারস্পরিক সমন্বয়ের নির্দেশও দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি প্রতি তিন মাস পরপর এসব কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেওয়াও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর সর্বশেষ জমা দেওয়া সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তথ্যে জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৬ হাজার ৪৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নামে মোট ৪৮ লাখ ৫ হাজার ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ এলাকার হিসাবের হারই বেশি—৫২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। শহরাঞ্চলে রয়েছে বাকি ৪৭ দশমিক ২৬ শতাংশ হিসাব। রাজধানীসহ সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শহর শাখার আওতায় ধরা হয়েছে।
ছাত্র ও ছাত্রীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও প্রায় সমতা দেখা যাচ্ছে। মোট হিসাবের মধ্যে ছাত্রদের অংশ ৫০ দশমিক ৮১ শতাংশ, আর ছাত্রীদের ৪৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। বর্তমানে দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র দুটি ছাড়া প্রায় সব ব্যাংকই স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব হিসাবে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট জমা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম যেন মাঝপথে থেমে না যায়, সে বিষয়েও আলাদা গুরুত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে তার স্কুল ব্যাংকিং হিসাব সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাবে রূপান্তর করতে হবে। এ পর্যন্ত ১১ লাখ ৮৭ হাজার স্কুল ব্যাংকিং হিসাব এভাবে সাধারণ হিসাবে রূপান্তর হয়েছে।
এ ছাড়া চলতি বছরের মধ্যে প্রতিটি ব্যাংক শাখাকে অন্তত ৩০০টি নতুন স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলার লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ১০০টি হিসাব খোলার কথা বলা হয়েছিল। এসব উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলতি বছর ১৩টি স্কুল ব্যাংকিং সম্মেলনও আয়োজন করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, ২০১০ সালের আগে ১৮ বছরের কম বয়সীরা ব্যাংক হিসাব খুলতে পারতেন না। টেকসই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে সেই নীতিতে পরিবর্তন এনে স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যাংকিং সুবিধা চালু করা হয়। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দেখিয়ে মাত্র ১০০ টাকা জমা দিয়েই যে কোনো ব্যাংকে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খুলতে পারেন একজন শিক্ষার্থী। যেহেতু আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সীরা অপ্রাপ্তবয়স্ক, তাই এক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি বাধ্যতামূলক।

