ঢাকার এক নারী করদাতাকে ২৭ বছর আগের বকেয়া কর পরিশোধের নোটিশ পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আইনগতভাবে বাধা না থাকলেও কর বিশেষজ্ঞরা এটিকে ‘চরম অদক্ষতা’ এবং করদাতার প্রতি ‘অবিচার’ হিসেবে দেখছেন।
এনবিআরের সূত্রে জানা গেছে, ট্যাক্স জোন–৬-এর অতিরিক্ত সহকারী কমিশনার অব ট্যাক্সেস (ইএসিটি) সালমা খাতুনের সই করা নোটিশ ৭ ডিসেম্বর পাঠানো হয়। নোটিশে ১৯৯৭–৯৮ কর বছরের ২৭,৫৩৪ টাকা আয়কর ও ৪,১৩১ টাকা সুদসহ মোট ৩১,৬৭৪ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একই নোটিশে পরবর্তী বছরের ৭১৯ টাকা এবং ২০০৬–০৭ কর বছরের ২,০৭৫ টাকা যোগ করে মোট ৩৪,৪৬৮ টাকা পরিশোধের জন্যও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না হলে জরিমানা আরোপ এবং ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হতে পারে।
সাবেক এনবিআর সদস্য ড. সৈয়দ মো. আমিনুল করিম বলেন, “২৭ বছর পর বকেয়া কর নোটিশ পাঠানো কর বিভাগের চরম অদক্ষতার পরিচায়ক। সাধারণত কোনো কর দাবি চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়।” তিনি এটিকে করদাতার প্রতি ‘অবিচার’ বলেও উল্লেখ করেছেন।
আয়কর উইংয়ের আরেক সাবেক সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, “এত দীর্ঘ সময় পরে বকেয়া কর নোটিশ পাঠানোর ঘটনা আমার জানা প্রথম। কোর্টে মামলা চলতে থাকলে ব্যাখ্যা মিলতে পারে, কিন্তু তার বাইরে এর কোনো যৌক্তিক কারণ দেখছি না।” তবে দুজনই জানিয়েছেন, আইনের দৃষ্টিতে এমন নোটিশ পাঠাতে কোনো বাধা নেই।
ট্যাক্স জোন–৬-এর কমিশনার শ্রাবণী চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে একই কর অফিসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বকেয়া কর আদায়ের জন্য আমাদের তাগাদা এসেছে। তাই গণহারে নোটিশ পাঠানোর সময় এই করদাতাকেও পাঠানো হয়েছে। ফাইলগুলো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত থাকায় হয়তো নজরে আসেনি। কোনো মামলা চলছিল না, ফাইল পুনরায় খোলার বিষয়ও নয়।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) রয়েছে। এর মধ্যে নিয়মিত রিটার্ন জমা দেন প্রায় ৪৫ লাখ করদাতা। আয়কর আইন অনুযায়ী, করের দাবি কখনো মুছে যায় না। করদার মৃত্যু হলেও তার উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে কর আদায়ের বিধান রয়েছে।

