দেশে মূলধারার যানবাহনের পাশাপাশি থ্রি-হুইলার রিকশার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই যানবাহনের অধিকাংশের নেই কোনো রেজিস্ট্রেশন বা লাইসেন্স। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরের সামনে চলাচল করছে এসব যান। এর ফলে ঘটে নানা ধরনের দুর্ঘটনা।
অনেকবার থ্রি-হুইলার নিয়ন্ত্রণের দাবি উঠলেও কার্যকর ব্যবস্থা এখনও গ্রহণ করা হয়নি। এ কারণে একটি কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে থ্রি-হুইলার দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে এবং অর্থনৈতিক গতি বাড়াবে।
গতকাল সোমবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ‘স্টাডি অন ইন্টিগ্রেটিংস ইলেকট্রনিক থ্রি-হুইলার ইনটু ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়েফরওয়ার্ড’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সিপিডির প্রোগ্রাম সহযোগী মো. খালিদ মাহমুদ বলেন, দেশে লাখ লাখ থ্রি-হুইলার চলে। কিন্তু নিবন্ধিত আছে মাত্র সাড়ে ২২ হাজার। এর বাইরে থ্রি-হুইলার রিকশার সংখ্যা ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন ১১২ কোটি মানুষ সেবা নিচ্ছে। এত বড়সংখ্যক যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন নেই। চালকদের অধিকাংশের নেই প্রশিক্ষণ। ফলে দক্ষতা বাড়ছে না। মুখের কথায় চলছে সব। তিনি বলেন, “যদি প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা যায়, তাহলে সরকার আয় পাবে। একই সঙ্গে ক্ষতিও কমবে। যারা এই খাতের সঙ্গে যুক্ত, তাদের আয় বাড়বে। এর বিশাল ইতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।”
খালিদ মাহমুদ আরও বলেন, “নীতিমালা ছাড়া লাখ লাখ থ্রি-হুইলার চলছে। এই গণপরিবহন যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবে চলছে। এটার সিস্টেম দাঁড় করাতে হবে। স্ট্রাকচার থাকতে হবে। ব্যাটারি ক্যাপাসিটি নির্ধারণ করতে হবে। ইলেকট্রনিক যান হওয়ায় পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। কার অনুমোদন নিয়ে চলবে, তা নির্ধারণ করতে হবে। আইন প্রয়োগ জরুরি। কেউ আইন লঙ্ঘন করলে তার শাস্তি দিতে হবে। তখন এলোমেলো চলাচল নিয়ন্ত্রণ হবে এবং মানুষ উন্নত সেবা পাবে।” তিনি বলেন, “এ ধরনের যানবাহনের প্রায় ৪০ লাখ চালক এবং তাদের পরিবারসহ বিশাল জনগোষ্ঠী সুবিধাভোগী। তাদের রোড নেটওয়ার্ক, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক সেফটি, এয়ার কোয়ালিটির জন্য স্পষ্ট কাঠামো ও নীতিমালা জরুরি।”
অনুষ্ঠানে নীতিমালা অনুযায়ী ইজিবাইক ও রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের নিবন্ধন, চালকের লাইসেন্স ও রুট পারমিট দেওয়ার কথাও বলা হয়। পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত যানবাহনের কারিগরি ত্রুটি সংশোধন এবং আধুনিকায়ন, বিদ্যুৎ চুরি ও অপচয় রোধে চার্জিং স্টেশন স্থাপন, প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কে সার্ভিস রোড বা বাই লেন নির্মাণের প্রস্তাবনা এসেছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক জব্দ বন্ধ করা, জব্দ গাড়ি ও ব্যাটারি ফেরত দেওয়া, চালক ও সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, সড়কে চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধ করা এবং চালকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

