দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বাজেট ব্যয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠকটি সম্পন্ন হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে মূল্যস্ফীতি, মজুরি প্রবৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদন, আর্থিক ও বৈদেশিক খাত, চলতি হিসাব, প্রবাসী আয়, আমদানি ও ঋণপত্র বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয়, সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে ২০২৬ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ১২ মাসের গড় হিসাবে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি চলতি বছরের নভেম্বরে ৯ শতাংশের নিচে নেমেছে। মার্চ ২০২৩-এ মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট হিসেবে ৯.৩৩ শতাংশের বেশি ছিল। কিন্তু চলতি বছরের জুনে এটি ৯ শতাংশের নিচে চলে আসে এবং নভেম্বরে ৮.২৯ শতাংশে নেমেছে। আশা করা যায়, আগামী জুনে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে যাবে।
মজুরি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বলা হয়, বিগত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি বৃদ্ধির মধ্যে পার্থক্য অনেক বেশি ছিল। ফলে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে আসছিল। তবে চলতি অর্থবছরের সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পার্থক্য কমেছে। নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৮.২৯ ও ৮.০৪ শতাংশ হয়েছে। এটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের গড় ৯.০২ ও ৭.০৪ শতাংশের তুলনায় সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে চলতি অর্থবছরে প্রকৃত আয়ের হ্রাসের সমস্যা কমে যাবে।
কৃষি উৎপাদনের বিষয়ে বলা হয়, যথাযথ প্রণোদনা ও ব্যবস্থাপনার কারণে বিগত অর্থবছরে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটায় আমন ধানেরও ভালো ফলনের আশা করা যাচ্ছে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমন ধানের উৎপাদন ১৬০.৯৫ লক্ষ টনে পৌঁছেছে। বাকি ফসল কাটা হলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম হবে। আউশ ধানের উৎপাদন কিছুটা কম হলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় মোট উৎপাদন ৭.২০ শতাংশ বেড়েছে। দেশের অর্থনীতির ভারসাম্যহীনতা এখন অনেকটা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে এসেছে।
চলতি ১৮ ডিসেম্বর গ্রোস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২.৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। এটি আগস্ট ২০২৪-এ ছিল প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার। মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল হওয়া, প্রবাসী আয়ের বৃদ্ধি এবং সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
২০১৬-১৭ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলতি হিসাব ঋণাত্মক ছিল। ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যথাক্রমে -১৮.৭, -১১.৬ ও -৬.৬ বিলিয়ন ডলার ছিল। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে এটি ১৩৯ মিলিয়ন ডলারে এসেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে চলতি হিসাব ৭৪৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে পাঁচ লাখ কর্মীর বৈদেশিক নিয়োগ হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার। একই সময়ে প্রবাসী আয় ১৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭.১৪ শতাংশ বেশি। দেশের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আমদানিতে আরোপিত বিধিনিষেধও অপসারণ করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে আমদানি প্রবৃদ্ধি -১.২ শতাংশ ছিল। চলতি অর্থবছরে এটি বেড়ে ৬.১ শতাংশে এসেছে।
মূলধনি যন্ত্রপাতির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরের প্রবৃদ্ধি -৩২.৮ শতাংশ ছিল। চলতি অর্থবছরে এটি বেড়ে ২৭.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শিল্পজাত কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার প্রবৃদ্ধি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১০.১ শতাংশ ছিল। চলতি অর্থবছরে এটি বেড়ে ৪০.৯৮ শতাংশে পৌঁছেছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক ইমেজের অবনতি রোধ হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

