চীন তাদের ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী করতে নতুন এক অধ্যায়ে পা রাখতে যাচ্ছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে দেশটি ডিজিটাল ইউয়ান চালু ও পরিচালনার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়ন শুরু করবে বলে জানিয়েছেন চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়নার (পিবিওসি) এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
পিবিওসির উপ-গভর্নর লু লেই এক প্রতিবেদনে বলেন, ভবিষ্যতের ডিজিটাল ইউয়ান হবে আধুনিক ও নিরাপদ একটি ডিজিটাল পেমেন্ট মাধ্যম, যা পুরোপুরি আর্থিক ব্যবস্থার ভেতরেই ইস্যু ও প্রচলিত হবে। তাঁর ভাষায়, এটি শুধু একটি প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক লেনদেন ব্যবস্থার একটি নতুন ভিত্তি।
এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ‘নতুন প্রজন্মের’ ডিজিটাল ইউয়ান কাঠামো চালু করা হচ্ছে। এর আওতায় থাকবে স্পষ্ট পরিমাপ কাঠামো, আধুনিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, কার্যকর অপারেটিং মেকানিজম এবং একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ইকোসিস্টেম। অর্থাৎ ডিজিটাল ইউয়ান শুধু ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং একটি সমন্বিত আর্থিক পরিবেশ গড়ে তোলার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।
এই পরিকল্পনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—ডিজিটাল ইউয়ানে রাখা গ্রাহকের ব্যালেন্সে সুদ দেওয়ার ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে মানুষকে আরও বেশি করে ডিজিটাল ইউয়ান ব্যবহারে উৎসাহিত করতে চায় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশ্লেষকদের মতে, সুদের সুবিধা যুক্ত হলে প্রচলিত ডিজিটাল পেমেন্টের পাশাপাশি ডিজিটাল ইউয়ান দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে।
এ ছাড়া পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পূর্ব চীনের আর্থিক কেন্দ্র সাংহাইয়ে একটি আন্তর্জাতিক ডিজিটাল ইউয়ান অপারেশনস সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে সীমান্ত পেরিয়ে ডিজিটাল ইউয়ানের ব্যবহার ও প্রভাব বাড়ানোর পথ তৈরি হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখন নিজ নিজ ডিজিটাল মুদ্রা চালুর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। করোনা মহামারির সময় অনলাইন লেনদেনের ব্যাপক বৃদ্ধি এবং বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তা এই প্রবণতাকে আরও জোরালো করেছে। চীন এই দৌড়ে অনেক আগেই এগিয়ে গেছে।
২০১৪ সাল থেকেই পিবিওসি ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন শহরে পরীক্ষামূলকভাবে ‘ডিজিটাল ইউয়ান’ বা ‘ই-সিএনওয়াই’ ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও চীনে মোবাইল ও অনলাইন পেমেন্ট বহু আগে থেকেই জনপ্রিয়, তবে ডিজিটাল ইউয়ান চালুর মাধ্যমে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে লেনদেনের তথ্য ও নিয়ন্ত্রণ থাকবে—এটাই সরকারের মূল লক্ষ্য।

