কোকাকোলা ও ইসরাইলের বন্ধুত্ব শুরু হয় ১৯৬৬ সাল থেকে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার অঙ্গরাজ্য কলম্বাসের ঈগল ড্রাগ এন্ড কেমিক্যাল কোম্পানিতে এটির আদি রেসিপি তৈরি হয়েছিল। এই আদি রেসিপির নাম ছিল কোকা ওয়াইন বা ফ্রেন্স ওয়াইন এবং এর জনক ছিলেন “জন পেম্বারটন” নামক একজন ড্রাগিস্ট।
পরবর্তীতে ১৮৮৬ সালে আটলান্ট ও ফুলটন কাউন্টি অ্যালকোহলিক পানীয়র বিরুদ্ধে আইন পাস করেন, তখন পেম্বার টন এই কোকা ওয়াইন এর অ্যালকোহল মুক্ত সংস্করণ তৈরি করেন। যার বাজারজাত ও বিক্রি শুরু হয় ৮ই মে ১৮৬৬ সালে। যদিও কোকাকোলার প্রথম ব্যবহার হয়েছিল প্যাটেন্ট ঔষধ হিসেবে, তার প্রতি গ্লাসের মূল্য ছিল ৫ সেন্ট করে। যদিও প্রথম বছর বিক্রি হয়েছিল মোট নয় ক্লাস মাত্র, কিন্তু তা বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে প্রতিদিন বিক্রি হয় প্রায় ১৬০ কোটি গ্লাস।
ইজরায়েল ও কোকাকোলার সম্পর্ক প্রায় ৫৮ বছর হলো যার যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৬ সাল থেকে। কোকাকোলার যে ফ্যাক্টরিটি নিয়ে বিজ্ঞাপনে গর্ব করেছিল ইসরায়েল সেটি ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯১ সালে দখলকৃত ফিলিস্তিনের ভূমিতেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। যদিও তার কারণে আরব লীগের দেশগুলো কোকাকোলা কে আনুষ্ঠানিকভাবে বয়কট করেছিল। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৯৭ সালে কোকাকোলা কে প্রায় ৩০ বছর ধরে সহযোগিতা করার জন্য সম্মানিত হয়েছিল ইসরায়েল। এমনকি কোকাকোলা কে মার্কিন ইসরায়েলি “চেম্বার অব কমার্স” অ্যাওয়ার্ডসকেও স্পন্সর করে। এবং এরই মাধ্যমে ইসরায়েলি অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য কোকাকোলা সহ আরো কিছু ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। তাছাড়াও কোকাকোলা আইপ্যাকের মাধ্যমে লবিংয়ের জন্য ২০০৯ সালে একটি পুরস্কার স্পন্সর করেছিল, এবং সাথেই গাজায় অব্যাহত সামরিক হামলার সমর্থন করে জাতিসংঘের যুদ্ধ বিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিল।
চলতি বছরের ১৮ই জানুয়ারি সুইজারল্যান্ড এর ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় কোকাকোলার সি ই ও জেমস কুইন্স কে বোম্বার্গ ‘ ইসরাইলপন্থী কোম্পানি ‘ হওয়ার অভিযোগ করে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা এড়িয়ে গিয়ে অস্বস্থির সাথেই বলেন যে-
“দেখুন আমি আপনাকে একটি সহজ উদাহরণ দেই- আমাদের ইসরাইল ও গাজায় বোতল ও প্রস্তুতের ফ্যাক্টরি সহ আমরা প্রায় বিশ্বের প্রতিটি দেশেই ব্যবসা করে যাচ্ছি।”
বাংলাদেশে কোকাকোলার বিতর্কিত বিজ্ঞাপনটি আন্তর্জাতিকভাবে নজর কাড়ার পাশাপাশি আল জাজিরা, মেডেল ইস্ট আই ও দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট (ইউকে) এর মত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়া আউটলেটও এই খবরটি কভার করেছিল।
কোকাকোলা যুদ্ধের রেশ ধরে ২০২২ এর মার্চ মাস থেকে রাশিয়ায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করলেও পক্ষান্তরে ইজরাইলের হামলা অব্যাহত থাকলেও সেখানে ব্যবসায়ী কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রেখেছিল
তাছাড়াও কোকাকোলার প্রধান শেয়ার হোল্ডারগুন প্রকৃতপক্ষে ইজরাইল পন্থী এটিতে তিনটি কোম্পানির ভোটের ক্ষমতা ৫ শতাংশেরও বেশি। সেগুলি হলো বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে ইনকর্পোরেটেড(৯ ভাগ), ভ্যানগার্ড গ্রুপ ইনকর্পোরেটেড ( ৯ভাগ) ব্ল্যাকরক ইনকর্পোরেটেড (৭ভাগ)।
বার্কশায়ার ২০০৬ সালে ৪ মিলিয়ন ডলারে ইসরাইলি কোম্পানি ইসকারের ৮০ ভাগ শেয়ার ক্রয় করেন। এবং পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বাকি 20 ভাগ শেয়ারও ক্রয় করে নেয়।
বার্কশায়ার কোম্পানির ওয়ারেন বাফেট নিজেকে নিরপেক্ষ জায়ানিস্ট হিসেবে অবহিত করে বলেন –
‘আমি ইসরাইলি বন্ডের মালিক হতে পেরে আনন্দিত’।
সম্প্রতি ওয়ারেন বাফেট ৪০০ মিলিয়ন ডলার দান করেছিলেন বেন-গুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়কে।
ইসরায়েলের সম্পর্কে মন্তব্য করে বাফেট আরো বলেন-
“আমি ইসরাইলের পুরো ৭০ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী।আমি বিশ্বাস করি এটি বিশ্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে একটি। যুক্তরাষ্ট্র তথা কোকাকোলা ও ইসরায়েল সময় একসাথেই থাকবে। এটি বেশ ইতিবাচক যে, ইজরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের পাশাপাশি সব সময় রয়েছে। “