কলকাতার টালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে প্রতারণা চক্র। নামি প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতার নামে ভুয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রোফাইল তৈরি করে অভিনেত্রীদের কাছ থেকে অর্থ দাবি করা হচ্ছে। এ নিয়ে অভিনেত্রী মৌমিতা পণ্ডিত আনন্দবাজার অনলাইনকে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য জানিয়েছেন। ঘটনার সূত্রপাত যখন এক ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মৌমিতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়। যা তার সন্দেহজনক বলে মনে হয়নি। কারণ প্রোফাইলটিতে টালিউডের অনেক পরিচিত মুখ বন্ধুসূচিতে ছিলেন।
প্রথমে মৌমিতা এই প্রোফাইলটিকে আসল ভেবে যোগাযোগ করেন এবং প্রযোজক হিসেবে পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তির প্রস্তাব মেনে সিড নামের এক কাস্টিং ডিরেক্টরের সঙ্গে দেখা করতে যান। কসবার একটি ক্যাফেতে সেই কাস্টিং ডিরেক্টর তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তবে তিনি চিত্রনাট্যের ‘গোপনীয়তা’ বজায় রাখতে মৌমিতার গাড়িতেই বসে চিত্রনাট্য শোনাতে শুরু করেন। এই সময় মৌমিতার গাড়ির চালকও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এভাবে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে থাকায় মৌমিতার সন্দেহ আরও গভীর হয়। সেই ব্যক্তি ‘কণ্ঠ’ ও ‘সূর্য’র মতো সফল ছবিতে কাজের প্রস্তাব দিয়ে তার কাছে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করান এবং সরকারি পরিচয়পত্রের প্রতিলিপিও সংগ্রহ করেন।
এরপর অডিশনের নামে মৌমিতাকে একটি হোটেলে যেতে বলা হয়। সন্দেহ প্রবল হওয়ায়, মৌমিতা হোটেল থেকে বেরিয়ে আসেন এবং অডিশনের ভিডিও পরে পাঠানোর প্রস্তাব দেন। অভিনেত্রীর অভিযোগ, এরপর ওই ব্যক্তি তার কাছে টালিপাড়ার ‘আর্টিস্ট ফোরাম’-এর সদস্যপদ করিয়ে দিতে পারার কথা বলেন এবং এর জন্য অর্থ দাবি করেন। মৌমিতা বলেন, এতো বছর অভিনয় করেও তিনি প্রথম শুনলেন যে ফোরামের সদস্যপদ ছাড়া কাজ করা যাবে না।
পরবর্তীতে বুধবার সকালে প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতার নামের ওই ভুয়া প্রোফাইল থেকে মৌমিতার কাছে পুনরায় অর্থ দাবি করা হয়। এবার তাকে কিউআর কোড পাঠিয়ে ৭ হাজার ৫০০ টাকা পাঠাতে বলা হয়। অর্থ দিতে অস্বীকার করলে বাংলায় হুমকি দিয়ে জানানো হয়, টাকা না দিলে তার ক্যারিয়ারে ক্ষতি করা হবে। এতে আতঙ্কিত হয়ে মৌমিতা সোনারপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এবং কলকাতা পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন শাখাকেও বিষয়টি জানান।
তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তারা ঘটনার প্রমাণ হিসেবে ক্যাফে ও হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখার পরিকল্পনা করছে। মৌমিতা জানান, টালিপাড়ার সুদীপ্তা চক্রবর্তী, দামিনী বেণী বসু, তানিকা বসু প্রমুখ তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রযোজনা সংস্থাও ভুয়া প্রোফাইলটি নিষ্ক্রিয় করতে পদক্ষেপ নিয়েছে।
এই ঘটনাটি টালিপাড়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। নামি প্রযোজকের নাম ভাঙিয়ে নতুন অভিনেত্রীদের টার্গেট করে এ ধরনের প্রতারণা নজিরবিহীন। মৌমিতা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন সুযোগের অপেক্ষায় থাকা শিল্পীদের জন্য এটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।