নাটকে শীর্ষস্থানীয় অভিনেতাদের উচ্চ পারিশ্রমিককে ঘিরে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে নির্মিত বেশ কিছু নাটক প্রচারে না আসায় বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। প্রযোজকেরা বলছেন, তারকাদের পারিশ্রমিক ও শুটিং খরচের ভারে ইউটিউবভিত্তিক নাটকগুলোর আর্থিক ভারসাম্য রক্ষা করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে ছোট পর্দায় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পান অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। আগে নাটকপ্রতি ২-৩ লাখ টাকা নিলেও এখন একেকটি নাটকের জন্য নিচ্ছেন অন্তত চার লাখ টাকা। শর্ত থাকে, তিন দিনে শুটিং শেষ করতে হবে। তিন দিনের বেশি হলে প্রতিদিন বাড়তি দেড় লাখ টাকা নিতে হয়। ফলে কোনো কোনো নাটকের পারিশ্রমিক দাঁড়াচ্ছে ১০-১৫ লাখ টাকায়।
তালিকায় এরপর রয়েছেন মোশাররফ করিম, নিলয় আলমগীর, মুশফিক আর ফারহান—নাটকপ্রতি তাঁদের পারিশ্রমিক গড়ে তিন লাখ টাকা। তৌসিফ মাহবুব ও ফারহান আহমেদ জোভানসহ কয়েকজন নিচ্ছেন আড়াই লাখের মতো।
প্রযোজক সূত্রে জানা গেছে, এসব তারকাকে নিয়ে নির্মিত ‘বেস্ট ফ্রেন্ড ২’, ‘হৃদয়ের এক কোণে’, ‘প্রেমেরই পরশে’, ‘লাইজু’সহ প্রায় ২০টি নাটক ভালোবাসা দিবসে প্রচারের পরিকল্পনা থাকলেও স্পনসরের অভাবে আটকে গেছে। এগুলো এখন ঈদ উপলক্ষে প্রচারের চিন্তা করা হচ্ছে।
এদিকে ইতোমধ্যে ঈদের জন্য শতাধিক নাটকের কাজ শেষ হয়েছে বা সম্পাদনা পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু একই সময়ে পুরনো নাটকও প্রচারে আসবে- ফলে চাপ বাড়ছে প্রযোজকদের ওপর। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, নাটকের বাজেট এতটাই বেড়ে গেছে যে ইউটিউব থেকে লাভবান হওয়া সম্ভব নয়, ফলে তারা পুরোপুরি স্পনসরের ওপর নির্ভরশীল।
নির্মাতারা বলছেন, এই সংকট উত্তরণে শিল্পীদেরও ভূমিকা রাখা দরকার। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন শীর্ষ নির্মাতা জানান, গত ঈদুল আজহায় ২০টির বেশি বড় বাজেটের নাটক স্পনসর সংকটে আটকে যায়। ভালোবাসা দিবসেও এমন ৮০ শতাংশ নাটক প্রচারে আসেনি। এখন নতুন নাটক নির্মিত হচ্ছে, কিন্তু প্রচারের নিশ্চয়তা নেই।
তাঁর মতে, শিল্পীরা যদি ৫০ হাজার টাকা কমান, তাহলে নাটকপ্রতি বাজেট অন্তত ২ লাখ টাকা কমানো সম্ভব। এতে স্পনসরের ওপর চাপ কমবে, নাটক সময়মতো মুক্তি পাবে।
প্রযোজক শাহেদ আলী, যিনি ইউটিউব চ্যানেল সিএমভির কর্ণধার, বলছেন- এবার ভালোবাসা দিবসে আমাদের ছয়টি নাটক প্রচার করা সম্ভব হয়নি। শিল্পীদের পারিশ্রমিক কমানো ও সময়মতো শুটিং শুরু করলে অনেক খরচ বাঁচে। তাঁর মতে, সকাল ৯টায় শুটিং শুরু করে দিনের আলোয় কাজ শেষ করলে প্রতিটি নাটকে ২-৩ লাখ টাকা সাশ্রয় সম্ভব। তাহলে স্পনসরের ওপর নির্ভরতা কমবে বলে জানায় তিনি।
অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান জানান, সম্প্রতি তিনি একাধিক নাটকে পারিশ্রমিক কম নিয়েছেন বা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন। একটি নাটকে এক লাখ টাকা দিয়েও শুটিং শেষ করেছি। কোনো কৃতজ্ঞতাও কেউ জানায় না,—অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর কথায়- শুধু শিল্পীদের দোষারোপ না করে বাস্তবতা বুঝে সবাইকে সমঝোতার পথ খুঁজতে হবে। শিল্পীরাও ছাড় দিতে রাজি, কিন্তু নাটক যেন ঝুলে না থাকে।
এই পরিস্থিতিতে সামনে ঈদে কয়েকশ নাটক জমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। একাধিক প্রযোজক বলছেন, এই সংকট সমাধানে শিল্পী, নির্মাতা ও প্রযোজকদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে নাট্যজগত বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।