‘আমার মা বেঁচে ছিলেন ৯০ বছর। ফুফু আম্মা ৯৪ বছরের বেশি। আমি ভেবেছিলাম, বয়স হয়তো ৬০-৭০ হবে। কিন্তু কীভাবে যে এতটা বেলা হয়ে গেছে, টেরই পেলাম না। এবার আমি ৮৫ বছরে পা দেব।’
গতকাল শুক্রবার বিকেলে এভাবেই বলছিলেন বাংলাদেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান। আজ ২৮ জুন তাঁর জন্মদিন। ৮০ বছর পার করার পর প্রতিটা দিন বাড়তি পাওনা মনে করছেন ফেরদৌসী রহমান। বিষয়টির ব্যাখ্যা এভাবেই করলেন তিনি।
বললেন, ‘আশির পর এখন প্রতিটি দিন আল্লাহর কাছে বোনাস মনে হয়। আমাদের দেশে একটা সময় গড় আয়ু কত ছিল? আগে তো ৫০-৬০ হলেই মানুষ বুড়ো হয়ে যেত। আমার আব্বা মারা গেছেন ৫৯ বছর বয়সে। সেই তুলনায় আমি ৬৯, ৭৯ পেরিয়ে এখন ৮৫-তে পড়লাম। আব্বার চেয়ে প্রায় ২৫ বছর বেশি জীবন পেলাম, তাই না।’
১৯৪১ সালে ভারতের কোচবিহারে জন্মগ্রহণ করেন দেশের প্রথিতযশা সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান। পল্লিগীতির সম্রাটখ্যাত আব্বাসউদ্দীনের কন্যা ফেরদৌসীর সংগীতের সঙ্গে বসবাস খুব ছোটবেলা থেকে।
ফেরদৌসী রহমানের বাড়িতে জন্মদিন সেভাবে উদ্যাপন করা হতো না। বড় ভাই (সাবেক প্রধান বিচারপতি) মোস্তফা কামালের জন্মদিন হইচই করে উদ্যাপন করা হতো। গান হতো, কবিতা হতো, খাওয়া-দাওয়া হতো। ফেরদৌসী রহমানের জন্মদিন প্রথম ১৯৫৬ সালে উদ্যাপন করা হয়, যেদিন তিনি ম্যাট্রিকে স্ট্যান্ড করলেন, সারা দেশে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হলেন। ২৬ জুন ফল বের হয়, ২৮ জুন ছিল তাঁর জন্মদিন।
গত এক বছরে ফেরদৌসী রহমান ৩ জন আপন মানুষকে হারিয়েছেন। এর মধ্যে আছেন স্বামী রেজাউর রহমান, সংগীতজ্ঞ ভাই মুস্তাফা জামান আব্বাসী ও ভাইয়ের স্ত্রী আসমা আব্বাসী। সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমানের জন্মদিন স্বামী নীরবে উদ্যাপন করলেও ভাই মুস্তাফা জামান আব্বাসী ও তাঁর স্ত্রী আসমা আব্বাসী বেশ হইহুল্লোড় করতেন। ফুল আর কেক নিয়ে বনানীর বাসায় হাজির হতেন।
ফেরদৌসী রহমান বললেন, ‘আমি আসলে কখনোই সেভাবে জন্মদিন নিয়ে আগ্রহী ছিলাম না। তাই পালনও করতাম না। কিন্তু আমার স্বামী খুব নীরবে নানা আয়োজন করত। ইন্ট্রোভার্ট ছিল তো, কিছু করেও চুপচাপ থাকত। আর ভাই-ভাবি যত ব্যস্তই থাকুক, জন্মদিনে কেক আর ফুল নিয়ে চলে আসত। কেক কাটতে খুব পছন্দ করত। এবার তিনজন মানুষের কেউই নেই। খুব মন খারাপ হয়। আজ বিকেলে বসে বসে তাই ভাবছিলাম, জীবন এভাবেই পার হয়ে যায়। এই দিনে তিনজনের কথা খুব মনে পড়বে।’
জীবন নিয়ে ফেরদৌসী রহমান অনেক খুশি। জানালেন জীবন নিয়ে উপলব্ধির কথাও। ফেরদৌসী রহমান বললেন, ‘যদি কেউ জীবনকে সুখ হিসেবে মনে করে, তাহলে উদ্যাপনের। আবার কেউ যদি ভাবে এটা পানিশমেন্টের, তাহলে পানিশমেন্টের। পুরোপুরি নির্ভর করছে, কীভাবে জীবনটাকে দেখা হচ্ছে। প্রতিটি দিন যদি কারও কাছে সুন্দর হয়, তাহলে এটা অবশ্যই উদ্যাপনের। অন্যদিকে প্রতিটি দিন যদি কারও কাছে কষ্টের হয়, তাহলে এটা পানিশমেন্টের। তবে আমি মনে করি, জীবনটা হচ্ছে সুখ-দুঃখের একটা মিশ্রণ। ভালো-মন্দ মিলিয়েই জীবন। কারও একটু বেশি ভালো, কারও একটু কম খারাপ।’