পানি সরবরাহ বৃদ্ধি ও স্যানিটেশন খাতে অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ এখনো নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। গত এক দশকে নিরাপদ পানি প্রাপ্তির হার মাত্র ৩ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমান গতিতে এগোলে সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে আরো অন্তত ৭৫ বছর সময় লাগবে। অন্যদিকে ভারত ও ভুটান আগামী ২৫ বছরের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে পারবে। পাকিস্তান এই সূচকে বাংলাদেশ থেকেও পিছিয়ে রয়েছে।
জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) যৌথ উদ্যোগে তৈরি জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রামের (জেএমপি) সদ্য প্রকাশিত ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) খাতে দেশগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরে।
জেএমপির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষ বর্তমানে পানির সরবরাহ সুবিধার আওতায় থাকলেও নিরাপদ পানির প্রাপ্তি অনেক কম। ২০১৫ সালে নিরাপদ পানির আওতায় ছিলেন ৫৬ শতাংশ মানুষ, বর্তমানে তা বেড়ে ৫৯ শতাংশে পৌঁছেছে।
অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “সবার জন্য পানি এবং সবার জন্য নিরাপদ পানি এক বিষয় নয়। এমডিজি অর্জনের সাফল্য নিয়ে আত্মতুষ্টি এসেছে, কিন্তু এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। নিরাপদ পানি সরবরাহে আমরা এখনো সক্ষমতা দেখাতে পারিনি।”

নিরাপদ পানির চ্যালেঞ্জ-
নিরাপদ পানি বলতে বোঝায় এমন পানি, যা বাড়ির ভেতরে বা নিকটে সহজলভ্য এবং দূষণমুক্ত। জেএমপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৪ জেলায় অর্ধেকেরও কম মানুষ নিরাপদ পানি পান করে। আর্সেনিক দূষণ রয়েছে প্রায় ৬০ জেলায়, আর পানির মলজাত জীবাণুর দূষণ অন্যতম প্রধান সমস্যা।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনাসহ বিভিন্ন শহরে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিও নিরাপদ নয়। এ বছরের শুরুতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্যাম্পাসে পানির দূষণের কারণে শিক্ষার্থীদের অসুস্থ হওয়ার ঘটনা এই সংকটের একটি দৃষ্টান্ত।
দক্ষিণ এশিয়ার চিত্র-
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নিরাপদ পানির প্রাপ্তিতে ভারত এগিয়ে আছে। সেখানে বর্তমানে ৭৬ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে, যা ২০১৫ সালে ছিল ৬১ শতাংশ। ভুটানে ৬৬ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানির আওতায় এসেছে। পাকিস্তানের অগ্রগতি সবচেয়ে ধীর; দেশটিতে বর্তমানে ৪৫ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পায়, যা এক দশক আগে ছিল ৪৪ শতাংশ। নেপালে নিরাপদ পানি প্রাপ্তি সবচেয়ে কম, মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ এর আওতায়।

ওয়াটার এইড বাংলাদেশের প্রধান হাসিন জাহান বলেন, “ভারত ও ভুটানের অগ্রগতির পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক অগ্রাধিকার। ‘স্বচ্ছ ভারত’ কর্মসূচি ছিল সরকারের মূল পরিকল্পনা। একই ধরনের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ছাড়া বাংলাদেশ নিরাপদ পানির ক্ষেত্রে বড় কোনো অর্জন করতে পারবে না।”
স্যানিটেশনে কিছু অগ্রগতি-
স্যানিটেশন খাতে অগ্রগতি তুলনামূলক দ্রুত। প্রতিবছর গড়ে ১.১ শতাংশ হারে উন্নতি হচ্ছে। তবে এই হারে চললে বাংলাদেশে সর্বজনীন স্যানিটেশন নিশ্চিত হতে ২০৮৩ সালের আগে সম্ভব নয়। নেপাল ২০৪৯ সালের মধ্যে এবং ভারত ২০৪১ সালের মধ্যে এই লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে। বর্তমানে প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ন্যূনতম স্যানিটেশন সুবিধা থেকেও বঞ্চিত, আর ২ কোটি মানুষ হাত ধোয়ার মৌলিক সুবিধাবঞ্চিত অবস্থায় বাস করছে।