বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের প্রারম্ভিক যুগে এক বিশাল কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান পেয়েছেন। এটি তাত্ত্বিক সীমার চেয়ে ২.৪ গুণ বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আবিষ্কার প্রাচীন মহাবিশ্বে কৃষ্ণগহ্বরগুলো কীভাবে এত দ্রুত বড় হয়েছে, সেই রহস্যকে আরও জটিল করেছে।
নাসার চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি ব্যবহার করে গবেষকরা ‘আরএসিএস জে০৩২০–৩৫’ নামের এই কৃষ্ণগহ্বর চিহ্নিত করেন। এটি বিগ ব্যাংয়ের মাত্র ৯২ কোটি বছর পরে তৈরি হয়, যখন মহাবিশ্বের বয়স এখনকার তুলনায় এক-পঞ্চদশাংশ মাত্র।
সেই সময়েই কৃষ্ণগহ্বরটির ভর সূর্যের প্রায় ১০০ কোটি গুণ। এটি এখনও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্স-রে, ইনফ্রারেড এবং অপটিক্যাল তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কৃষ্ণগহ্বরটি প্রতিবছর সূর্যের ৩০০ থেকে ৩ হাজার গুণ ভরের সমান পদার্থ গিলে খাচ্ছে। এই হার তার তাত্ত্বিক সর্বোচ্চ সীমা, বা ‘এডিংটন সীমা’, অতিক্রম করেছে।
‘এডিংটন সীমা’ নির্ধারণ করে কৃষ্ণগহ্বর কত দ্রুত বড় হতে পারে। এটি কৃষ্ণগহ্বরের আকর্ষণ বল এবং বিকিরিত শক্তির চাপের ভারসাম্য নির্দেশ করে। সাধারণত সীমা অতিক্রম করলে গহ্বরটি অস্থিতিশীল হয়ে যায়। তবে ‘আরএসিএস জে০৩২০–৩৫’ সেই সীমা অতিক্রম করেও স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা গবেষকদের কাছে চমকপ্রদ।
গবেষণাপত্রটি ৮ সেপ্টেম্বর দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্সে প্রকাশিত হয়েছে। প্রধান লেখক লুকা ইঘিনা বলেন, “এত দ্রুত বৃদ্ধিতে কৃষ্ণগহ্বরটি দেখে আমরা সত্যিই অবাক হয়েছি।”
কৃষ্ণগহ্বর সাধারণত বিশাল নক্ষত্রপতনের মাধ্যমে জন্ম নেয়। এই প্রক্রিয়ায় মহাকাশে একপ্রকার ‘মহাকর্ষীয় সিংকহোল’ তৈরি হয়। এরপর এটি আশপাশের পদার্থ গিলে বা অন্য কৃষ্ণগহ্বরের সঙ্গে মিশে বড় হয়। পদার্থ ইভেন্ট হরাইজন অতিক্রম করলে এটি আর ফিরে আসে না। ইভেন্ট হরাইজন হলো সেই সীমারেখা, যার বাইরে কোনো কিছুই ফিরে আসতে পারে না, এমনকি আলোও।
যখন বৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর আলো ও পদার্থকে প্রায় আলোর গতিতে টানে, তখন তার চারপাশে উজ্জ্বল আলোর বলয় তৈরি হয়। অনেক সময় এরা মহাকাশে তেজস্ক্রিয় জেট ছুড়ে দেয়, যা ঝলমলে আলোয় দিগন্তকে ম্লান করে। সবচেয়ে উজ্জ্বল কৃষ্ণগহ্বরকে কুয়াসার বলা হয়। ‘আরএসিএস জে০৩২০–৩৫’ এই ধরনের একটি কুয়াসার। প্রথমে এটি রেডিও টেলিস্কোপে ধরা পড়ে, পরে ২০২৩ সালে চন্দ্র এক্স-রে দিয়ে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
গবেষকরা ধারণা করেছেন, কৃষ্ণগহ্বরটি সাধারণ নক্ষত্রপতনের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে, যার ভর ১০০ সূর্যের কম। এটি কোনো বিশাল বা অস্বাভাবিক উৎস থেকে তৈরি হয়নি। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের অন্যান্য ‘সুপার-এডিংটন’ কৃষ্ণগহ্বরের তথ্যও প্রমাণ দেয়, যে প্রাচীন মহাবিশ্বে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া কৃষ্ণগহ্বর সম্ভবত বেশি সাধারণ ছিল।
এ ধরনের কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে আরও গবেষণা চালালে বিজ্ঞানীরা প্রথম প্রজন্মের কৃষ্ণগহ্বরের জন্ম ও বিকাশের রহস্য উন্মোচন করতে পারবেন। হার্ভার্ড ও স্মিথসোনিয়ানের গবেষক থমাস কনার বলেন, “মহাবিশ্ব কীভাবে প্রথম কৃষ্ণগহ্বর তৈরি করেছিল, সেটি আজও সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এই গবেষণা আমাদের সেই উত্তর খুঁজতে সাহায্য করছে।”