দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তদের হজে যেতে দেওয়া হবে না সৌদি আরবের সরকার। হজযাত্রার আগে প্রতিটি প্রার্থীকে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত প্রমাণিত হলেই কেবল হজের অনুমতি দেওয়া হবে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে হজযাত্রী প্রেরণকারী সকল দেশকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে—হজের মতো কঠিন ধর্মীয় অনুশ্ঠান সম্পন্ন করতে হলে শারীরিক সক্ষমতা অপরিহার্য। তাই অসুস্থ ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের হজে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
সৌদি সরকারের নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যাদের কিডনি ডায়ালাইসিস চলছে, গুরুতর হৃদরোগ বা ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে এবং যারা সারাক্ষণ অক্সিজেন সাপোর্টে থাকেন, তাদের হজে যেতে দেওয়া হবে না। একইভাবে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও হজের অনুমতি পাবেন না।
তাছাড়া গুরুতর স্নায়বিক বা মানসিক রোগে ভোগা, স্মৃতিভ্রষ্ট, বা অতি বয়স্ক ব্যক্তিরা—যাদের চলাফেরায় অসুবিধা রয়েছে, তারাও হজযাত্রার অনুমতি পাবেন না।
গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে থাকলে বা চিকিৎসকদের মতে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা হলে, তারাও এ বছর হজে যেতে পারবেন না।
এ ছাড়া সংক্রামক রোগে আক্রান্ত—যেমন যক্ষ্মা বা ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বর, কিংবা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে কেমোথেরাপি বা ইমিউনোথেরাপি নিচ্ছেন এমন রোগীদের হজের অনুমতি দেবে না সৌদি সরকার।
সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বলেছে, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য কেবল রোগীদের সুরক্ষা নয়, বরং পবিত্র মক্কায় লাখো মানুষের সমাগমে যেন কোনো সংক্রামক বা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করা।
এ জন্য প্রতিটি হজযাত্রীর বৈধ স্বাস্থ্য সনদ (Medical Fitness Certificate) ইস্যু করতে হবে, যা নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করতে হবে। এই সনদের সত্যতা যাচাই করবে সৌদি মনিটরিং টিম।
যদি কোনো দেশের হজযাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি পাওয়া যায়, তবে সেই দেশের প্রতি সংশোধনমূলক ও নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বাংলাদেশের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, “সৌদি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকেও স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলা হবে। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হজে নিবন্ধন না করার অনুরোধ ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে।”
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজ এজেন্সিগুলোকেও এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে কোনোভাবেই শারীরিকভাবে অক্ষম বা অসুস্থ ব্যক্তিকে হজের জন্য নিবন্ধিত না করা হয়।
এ ছাড়া, সৌদি সরকারের অনুরোধে হজসংক্রান্ত স্বাস্থ্য নীতিমালা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বুঝতে বাংলাদেশের দুইজন চিকিৎসক বর্তমানে রিয়াদে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ ওয়ার্কশপে অংশ নিচ্ছেন।

