ফুটবল, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার নাম, যা কোটি মানুষের আবেগের কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্বজুড়ে ফুটবলের জনপ্রিয়তা যেমন তুঙ্গে, তেমনি ফুটবল ক্লাবগুলোর প্রতিও ভক্তদের আগ্রহ ও ভালোবাসা অপরিসীম। প্রতি বছর খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স এবং ক্লাবগুলোর আর্থিক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সংস্থা মূল্যায়ন করে। ২০২৪ সালেও ব্যতিক্রম হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা খেলাধুলা বিষয়ক ডিজিটাল সংস্থা স্পোর্টিকো এবারও ফুটবল ক্লাবগুলোর বাজারমূল্য নির্ধারণ করে শীর্ষ তালিকা প্রকাশ করেছে। এবং সেই তালিকার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
বিগত কয়েক বছর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তেমন উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে না পারলেও, তাদের আর্থিক সামর্থ্যে কোনো ঘাটতি পড়েনি। এমনকি সম্প্রতি ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে হেরে যাওয়ার পরও, ক্লাবটি প্রিমিয়ার লিগের চেলসির চেয়েও নিচে চলে গেছে। তবে, এই ব্যর্থতা তাদের আর্থিক সামর্থ্যে তেমন প্রভাব ফেলেনি। তাদের সর্বশেষ অর্জনের পেছনে মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ক্লাবটির নতুন মালিকানা। ব্রিটিশ ধনকুবের স্যার জিম র্যাটক্লিফ, যিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থক ছিলেন, ক্লাবটির ২৫ শতাংশ মালিকানা অধিগ্রহণ করতে বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ১.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বিশাল বিনিয়োগ ক্লাবটির আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং তাদের বাজার মূল্যকে শীর্ষস্থানে রাখতে মূল ভূমিকা পালন করেছে।
স্পোর্টিকোর তালিকায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পরেই রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ, যা কোনো ফুটবলপ্রেমীর কাছে অবাক করা বিষয় নয়। তবে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর বাজার মূল্য অন্যান্য লিগগুলোর তুলনায় যে পরিমাণ বেশি, সেটি বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ ক্লাবগুলোর সম্মিলিত মূল্য এবার দাঁড়িয়েছে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা লা লিগা ও বুন্দেসলিগার শীর্ষ ডিভিশনের ক্লাবগুলোর সম্মিলিত মূল্যের সমান!
স্প্যানিশ ক্লাবগুলোর মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদের পর বার্সেলোনা রয়েছে তৃতীয় স্থানে। যদিও বার্সেলোনার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট তাদের ব্যয় ও বিনিয়োগে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে, তবুও তাদের বিশ্বব্যাপী সমর্থন ও ক্লাবের ঐতিহ্য তাদের মূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে।
এমএলএস ক্লাবগুলোর উত্থান
২০২৪ সালের এই তালিকায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো মেজর লিগ সকার (MLS)-এর ক্লাবগুলোর উত্থান। শীর্ষ বিশের তালিকায় এমএলএসের পাঁচটি ক্লাবের নাম রয়েছে, যা একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। বিশেষ করে লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর ক্লাবটির টিকিটের দাম এবং দর্শকসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
এছাড়া, এমএলএস লিগ অ্যাপলের সাথে দশ বছরের জন্য ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মিডিয়া সত্ত্ব চুক্তি সম্পন্ন করেছে, যা লিগটির আর্থিক ভীতকে আরো মজবুত করেছে।
ক্লাবগুলোর তালিকা ও বাজার মূল্য-
২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ফুটবল ক্লাবগুলোর তালিকা এবং তাদের বাজারমূল্য নিচে তুলে ধরা হলো:
১. ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড: ৬.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
২. রিয়াল মাদ্রিদ: ৬.০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
৩. বার্সেলোনা: ৫.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
৪. লিভারপুল: ৫.১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
৫. বায়ার্ন মিউনিখ: ৪.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
৬. ম্যানচেস্টার সিটি: ৪.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
৭. পিএসজি: ৪.০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
৮. আর্সেনাল: ৩.৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
৯. টটেনহাম: ৩.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
১০. চেলসি: ৩.৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
১১. জুভেন্টাস: ১.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
১২. বরুশিয়া ডর্টমুন্ড: ১.৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
১৩. অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ: ১.৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
১৪. এসি মিলান: ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
১৫. লস আঞ্জেলেস এফসি: ১.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
১৬. ইন্টার মিলান: ১.০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
১৭. আটলান্টা ইউনাইটেড: ১.০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
১৮. ইন্টার মায়ামি: ১.০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
১৯. এলএ গ্যালাক্সি: ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
২০. নিউ ইয়র্ক সিটি এফসি: ৮৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার
ফুটবল শুধু খেলার মাঝে সীমাবদ্ধ নেই, এটি এখন একটি বিশাল আর্থিক বাজার। প্রতিটি ক্লাবের আর্থিক সামর্থ্য এবং খেলোয়াড়দের মূল্য ভক্তদের আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ফুটবলপ্রেমীরা বিশ্বকাপের পাশাপাশি ক্লাব ফুটবলও সমানভাবে অনুসরণ করে থাকেন। তারা তাদের প্রিয় খেলোয়াড়দের ক্লাব পারফরম্যান্সের দিকে নজর রাখেন এবং প্রতিটি ম্যাচেই তাদের সমর্থন প্রদান করেন।
বিশ্বের শীর্ষ ফুটবল ক্লাবগুলোর আর্থিক মূল্যমান প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। ২০২৪ সালের তালিকায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড শীর্ষে অবস্থান করলেও, প্রতিযোগিতামূলক এই খেলায় সামনের বছরগুলোতে অন্য ক্লাবগুলোও শীর্ষস্থান দখলের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।