লিথুয়ানিয়ায় রোববার অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলাফল রাজনীতির দৃশ্যপটে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সূচিত করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা রক্ষণশীল দলকে পেছনে ফেলে মধ্য বামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দল ১৪১ আসনের সংসদে ৫২টি আসন দখল করেছে। এই জয়ের মাধ্যমে তারা নতুন সরকার গঠনের পথে এগিয়ে চলেছে, যেখানে রক্ষণশীল দল মাত্র ২৮টি আসন পেয়েছে।
এবারের নির্বাচনে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মূল্যবৃদ্ধি কেন্দ্রীয় গুরুত্ব পায়। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রেক্ষাপটে দেশটির জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে শঙ্কা ও উদ্বেগ দেখা দেয়। লিথুয়ানিয়ার দীর্ঘ সীমান্ত রাশিয়া এবং বেলারুশের সঙ্গে অবস্থিত, যা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে ভীতি কাজ করছে, ফলে দেশটি ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার পরও প্রতিরক্ষার জন্য আরও জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণের পথে রয়েছে।
সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দলের নেতা ভিলিজা ব্লিনকেভিকিউট নির্বাচনের পূর্বে একাধিক সমমনা দলের সঙ্গে জোট গঠনের আলোচনা সম্পন্ন করেন। তিনি জানিয়েছেন, জোটের আলোচনা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং সরকার গঠনের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে। তিনি বলেন, “শহর, গ্রাম এবং ছোট শহরগুলোতে মানুষের একটাই দাবি ছিল- পরিবর্তন। নির্বাচনের ফলাফল সেই পরিবর্তনেরই নির্দেশ করে।”
বর্তমান সরকার তাদের পরাজয় মেনে নিয়ে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের অভিনন্দন জানিয়েছে। নির্বাচনে বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এবং কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে সরকারের কার্যক্রমের প্রতি জনতার অসন্তোষের ফলে বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা বিপর্যস্ত হয়েছে। লিথুয়ানিয়ায় কোভিডের সময় থেকেই মূল্যবৃদ্ধির যন্ত্রণা শুরু হয়, যা আজও কাটেনি। উপরন্তু, সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে, যার ফলশ্রুতিতে ভোটে বিরোধী দলের জয় সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
প্রথম রাউন্ড থেকেই বিরোধী দল এগিয়ে ছিল, যা লিথুয়ানিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও জটিল করে তুলেছে। জনসাধারণ এখন অপেক্ষা করছে, পরিবর্তনের এই ঢেউ আগামীতে লিথুয়ানিয়ার রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে কীভাবে প্রভাবিত করবে।