প্রায় এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলা প্রচারণার পর আজ চূড়ান্ত দিনে পৌঁছেছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের অপেক্ষা এখন শেষ। কে জয়ী হবেন, কে হাসবেন শেষ হাসি-এ প্রশ্নের উত্তরে শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষায় গোটা দেশ এবং বিশ্ব।
কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। তার এই ঐতিহাসিক সম্ভাবনার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ট্রাম্প, যিনি পরাজয়ের ক্ষত মুছে ফিরে আসার প্রত্যয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন।
ইলেকটোরাল কলেজ ও সুইং স্টেটের নিয়ামক-
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে শুরু হবে ভোটগ্রহণ, চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তবে এই নির্বাচনের জটিলতা অন্যরকম। এখানে পপুলার ভোট নয় বরং ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্ধারিত হয়। যে প্রার্থী ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পাবেন, তার হাতেই উঠবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব।
এই নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে কিছু সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্য। পেনসেলভেনিয়া, উইসকনসিন, জর্জিয়া, মিশিগান, অ্যারিজোনা, নেভাদা এবং নর্থ ক্যারেলিনায় এবার চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এসব রাজ্যে কারা জয়ী হবেন, তার ওপর নির্ভর করবে হোয়াইট হাউজের পরবর্তী বাসিন্দা।
বর্ণবাদ, নারী অধিকার এবং ভোটের হিসাব-
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বর্ণবাদ ও নারী অধিকার এক ঐতিহাসিক বাস্তবতা। দেশটির প্রায় ৭৫ শতাংশ ভোটার শ্বেতাঙ্গ এবং তাদের অধিকাংশই ট্রাম্পের সমর্থক। তাদের বিশ্বাস ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’-এর প্রতি। অন্যদিকে, কমলা হ্যারিস নারী ভোটের জন্য জনপ্রিয়, যিনি গর্ভপাতের অধিকার সমর্থন করেন এবং স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নারীদের ভোটার উপস্থিতি বেশি হলে, কমলার জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
জাতিগত ও অভিবাসী ভোটারদের প্রভাব-
যুক্তরাষ্ট্রের মোট ভোটারের মধ্যে ১৩ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ, যারা মূলত ডেমোক্রেটদের সমর্থক। এছাড়াও, হিস্পানিক এবং এশীয় বংশোদ্ভূত ভোটাররা সাধারণত কমলার পক্ষে। তবে দেশের অর্থনৈতিক মন্দায় হতাশ কিছু যুবক ট্রাম্পের প্রতি ঝুঁকছেন, কারণ তিনি একজন ব্যবসায়ী এবং অর্থনৈতিক উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বাংলাদেশি ভোটারদের মনোভাব এবং সম্ভাব্য প্রভাব-
যুক্তরাষ্ট্রে সুইং স্টেটগুলোতে বসবাসরত বাংলাদেশি ভোটাররাও বিভক্ত। বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকেরা কমলা হ্যারিসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকেছেন। তবে তরুণ প্রজন্ম মূলত অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক ইস্যু বিবেচনায় ভোট দিচ্ছেন। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ বলেন-
“কমলা হ্যারিস জয়ী হলে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হতে পারে, যদিও ট্রাম্পের বিজয়ে সরাসরি প্রভাবের সম্ভাবনা কম।”
ভোটের ফলাফল ও বিশ্ব প্রতিক্রিয়া-
যদিও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ফলাফল অনুমান করা কঠিন। তবু এটি নিশ্চিত যে, যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচন শুধু দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ নয়। ডেমোক্রেটদের সমর্থন পেয়েছেন মানবাধিকার কর্মী ও সুশীল সমাজের সদস্যরা, অন্যদিকে ট্রাম্পের পেছনে রয়েছেন কর্পোরেট গোষ্ঠী ও ব্যবসায়িক সম্প্রদায়। বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক ট্রাম্পের প্রচারণায় বড় অঙ্কের অর্থ অনুদান দিয়েছেন।
সুতরাং, কে জিতবেন সেই প্রশ্নে উত্তেজনা চরমে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন শুধু তাদের রাজনৈতিক দিক পরিবর্তন করবে না বরং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এর প্রভাব পড়বে বলেই ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।