ইরান মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসেবে সামরিক ও প্রযুক্তিতে গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ড্রোন প্রযুক্তি। ড্রোন বা অ-মানবিক বিমান (Unmanned Aerial Vehicles, UAVs) ইরানের সামরিক সক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে প্রশ্ন হল, ইরান এত ড্রোন কেন বানায়?
এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কৌশলগত, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কারণ।
সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও কৌশলগত সুবিধা –
ইরানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা, বিশেষ করে যুদ্ধের ক্ষেত্রে। ড্রোনগুলি তাদের জন্য একটি সস্তা এবং কার্যকরী বিকল্প। যেগুলি বড় আকাশচুম্বী বিমান বা হেলিকপ্টারের তুলনায় কম ব্যয়বহুল এবং আরও সহজে ব্যবহৃত হতে পারে। ড্রোনগুলি দূরপাল্লার আক্রমণ চালানোর জন্য খুবই উপযোগী, যা ইরানকে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালানোর সক্ষমতা প্রদান করে।
ইরান ড্রোন ব্যবহার করে নিজের সামরিক ক্ষমতা শক্তিশালী করার পাশাপাশি, এর মাধ্যমে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং স্যাটেলাইট নজরদারি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।
বিশেষ করে, তারা এসব ড্রোনের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করছে। যা তাদের দেশের ভূখণ্ডে যে কোনো ধরনের আগ্রাসন মোকাবেলা করতে সহায়ক।
টেকনিক্যাল উন্নতি ও যুদ্ধের নতুন কৌশল –
ড্রোনের ব্যবহার যুদ্ধের রূপরেখায় নতুন একটি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছে। এটি সশস্ত্র সংঘর্ষের সময় সৈন্যের জীবন রক্ষার পাশাপাশি সামরিক অপারেশনকে আরও কার্যকরী এবং নির্ভুল করেছে। ইরান তার ড্রোনগুলিকে উন্নত প্রযুক্তির সাথে মিলিত করে পরিপূর্ণ করে তুলেছে।
তারা বিভিন্ন ধরণের ড্রোন তৈরি করছে। যেগুলির মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকারী ড্রোন, নজরদারি ড্রোন এবং শত্রু ড্রোন ধ্বংসকারী ড্রোন অন্তর্ভুক্ত।
তাদের ড্রোন প্রযুক্তি প্রতিরক্ষা এবং আক্রমণ উভয় ক্ষেত্রেই একটি শক্তিশালী টুল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা এমন ড্রোন তৈরি করেছে যা দীর্ঘ সময় ধরে আকাশে থাকতে পারে। উচ্চ উচ্চতায় উড়তে সক্ষম এবং অল্প খরচে যুদ্ধের শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।
বৈদেশিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক চাপ-
বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র ও সামরিক শিল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির মাধ্যমে ইরান ড্রোন তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা তাদের ড্রোন প্রযুক্তি চীন, রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশগুলির সাথে শেয়ার করেছে। যা তাদের সামরিক সক্ষমতা আরও জোরালো করেছে।
ইরান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ড্রোন বিক্রির মাধ্যমে আয় করতে সক্ষম হয়েছে। যা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা শক্তিশালী করেছে। তারা ড্রোনের মাধ্যমে একদিকে নিজেদের অস্ত্র সরবরাহ শৃঙ্খলা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যেও ভূমিকা রেখেছে।
আত্মনির্ভরশীলতা ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা-
ইরান দীর্ঘকাল ধরে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের ওপর অস্ত্র ক্রয় এবং সামরিক প্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ইরানকে বাধ্য করেছে নিজেদের অস্ত্র সজ্জা এবং সামরিক প্রযুক্তি নিজেরাই তৈরি করতে। ড্রোন নির্মাণ প্রক্রিয়া এরই অংশ। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও বৈশ্বিক প্রতিকূল পরিস্থিতি ইরানকে একটি আত্মনির্ভরশীল সামরিক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিয়েছে। এইভাবে ইরান তাদের সামরিক প্রযুক্তি উন্নয়ন করে এবং ড্রোন তৈরি করে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে নিজেদের স্বাধীন রাখার চেষ্টা করছে।
সামরিক শক্তির আধুনিকীকরণের জন্য ইরান তার সশস্ত্র বাহিনীর জন্য এমন এক সমাধান চেয়েছিল যা কম খরচে বেশ কার্যকরী হতে পারে। ড্রোন প্রযুক্তি অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্রের তুলনায় অনেক সস্তা কিন্তু এর আক্রমণাত্মক ক্ষমতা অত্যন্ত শক্তিশালী। ফাইটার জেট বা হেলিকপ্টারের তুলনায় ড্রোনের নির্মাণ খরচ অনেক কম, আবার ড্রোনগুলো চালানোও অপেক্ষাকৃত সহজ এবং নিরাপদ।
এক্ষেত্রে, ড্রোন ইরানকে তার অস্ত্রশস্ত্রের বহর বৃদ্ধি করতে সক্ষম করেছে এবং প্রয়োজনীয় অস্ত্রের সুবিধা অর্জন করেছে। যেখানে বড় আক্রমণাত্মক বিমান বা সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশন চালানো প্রায় অসম্ভব বা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হতে পারে।
আঞ্চলিক শক্তি এবং কৌশলগত প্রভাব-
ইরান তার ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেবল নিজেদের ভূখণ্ডে নয় বরং আঞ্চলিক ক্ষেত্রে শক্তি বৃদ্ধি করতে কাজ করছে। তারা ড্রোন সরবরাহ করে বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠীকে, যেমন ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী, সিরিয়ার শিয়া মিলিশিয়া এবং ইরাকের প্রোক্সি গ্রুপগুলিকে। ইরান এই ড্রোনগুলো তাদের মিত্র গোষ্ঠীগুলিকে প্রদান করে যাতে তারা সৌদি আরব এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে পারে। এটি ইরানের আঞ্চলিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তাদের প্রভাব বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করছে।
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ও সামরিক সহযোগিতা-
ইরান তার সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য রাশিয়া, চীন এবং অন্যান্য দেশের সাথে সামরিক সহযোগিতা করেছে। তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাজারে ড্রোন বিক্রি করছে। যা তাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা শক্তিশালী করেছে এবং একই সাথে তাদের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে আরো প্রভাবশালী করেছে।
বিশেষ করে, ইরান তার ড্রোন প্রযুক্তি রাশিয়া এবং সিরিয়া সরকারের কাছে সরবরাহ করেছে। যা তাদের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে একটি শক্তিশালী কৌশলিক অঙ্গ হিসেবে কাজ করছে।
ইরান দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রোটোকল-ভিত্তিক (asymmetric) যুদ্ধ কৌশল অনুসরণ করে আসছে। এই কৌশলে তারা বড় শক্তিগুলির বিরুদ্ধে সরাসরি সংঘর্ষ এড়াতে চায়। তার পরিবর্তে তাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী, সন্ত্রাসী দল এবং আঞ্চলিক প্রক্সি শক্তির মাধ্যমে সামরিক যুদ্ধ চালানোর চেষ্টা করে। এই কৌশলের অংশ হিসেবে ড্রোন ব্যবহার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ড্রোনগুলি তাদের দূরপাল্লা আক্রমণ এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে সমর্থন দেয়। যার ফলে তাদের শক্তি আরও প্রসারিত হয়েছে।
ড্রোনের বৈচিত্র্য এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ-
ইরান তার ড্রোন প্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছে। তারা বিভিন্ন ধরনের ড্রোন তৈরি করেছে।
ক্লাসিক হামলা ড্রোন: যেগুলি ক্ষেপণাস্ত্র বহন করে এবং শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করে।
নজরদারি ড্রোন: যেগুলি দীর্ঘ সময় ধরে আকাশে থাকতে পারে এবং উপগ্রহের মতো শত্রুর গতিবিধি ট্র্যাক করতে সাহায্য করে।
জঙ্গি ড্রোন: যেগুলি আক্রমণ চালানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং অন্যান্য স্থল বাহিনীকে সমর্থন করে।
এছাড়া, তারা ড্রোনগুলোর ডিজাইন ও প্রযুক্তি উন্নত করার মাধ্যমে তাদের যুদ্ধক্ষমতাও বাড়াচ্ছে।
বিশেষ করে, কিছু ড্রোনের জন্য তারা “স্বায়ত্তশাসিত” সিস্টেম তৈরি করেছে, যা দূরবর্তী নিয়ন্ত্রণ ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
ইরান ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামরিক দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি, একটি ভবিষ্যত পরিকল্পনাও তৈরি করছে যেখানে ড্রোন মূলত যুদ্ধের একটি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে। তারা একদিকে তাদের বিমানবাহিনী শক্তিশালী করছে, অন্যদিকে ড্রোনের মাধ্যমে বিমানবাহিনীর কাজকে আরও কমপ্যাক্ট এবং নির্ভুল করতে সক্ষম হয়েছে।
ইরান ভবিষ্যতে এমন ড্রোন তৈরি করার পরিকল্পনা করছে যেগুলি অ্যান্টি-ড্রোন প্রযুক্তি সনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে।
দূরপাল্লার আক্রমণ-
ড্রোনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি খুব দূরপাল্লায় আক্রমণ চালাতে পারে। ফাইটার জেট বা অন্যান্য বিমান বাহিনীর তুলনায় ড্রোন দ্রুত উড়ে চলে এবং অনেক কম সময়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে। ইরান ড্রোনের মাধ্যমে তার আক্রমণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে, যা তাকে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক সক্ষমতা প্রদান করে।
উদাহরণস্বরূপ, ইরান নিয়মিতভাবে ড্রোন ব্যবহার করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইরাকের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালায়।
সৌদি আরবের উপর আক্রমণে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের দ্বারা ব্যবহৃত ইরানি ড্রোন এবং ইরাকের বিরুদ্ধে একাধিক হামলা ইরানের আক্রমণাত্মক সামরিক কৌশলকে আরো কার্যকরী করেছে। ইরান এই ধরনের ড্রোনের মাধ্যমে শত্রু দেশগুলির মূল অবকাঠামো, সেনাবাহিনীর অবস্থান এবং সরবরাহ শৃঙ্খলা ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।
ড্রোনগুলি খুবই নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম। ইরান তাদের ড্রোন প্রযুক্তি এমনভাবে উন্নত করেছে। যাতে এসব ড্রোন খুবই নির্ভুলভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য অস্ত্র বহন করে শত্রু লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে। ড্রোনের মাধ্যমে ইরান যুদ্ধক্ষেত্রে যথাযথ লক্ষ্যবস্তু নির্বাচন করতে পারে। যেমন শত্রুর সেনাবাহিনী, সুরক্ষা স্থাপনা, অস্ত্রাগার বা অন্য কোনো কৌশলগত স্থান। এর ফলে, ইরান কম সময়ে এবং কম ক্ষতির মাধ্যমে আরও বেশি কার্যকর আক্রমণ করতে সক্ষম হয়।
তাছাড়াও ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে ইরান তার শত্রুদের উপর আগাম তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। যা তাদের আক্রমণ পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নকে আরো সুসংগঠিত ও নির্ভুল করে তোলে।
যুদ্ধক্ষেত্রে বিশেষ অভিযান –
ড্রোনগুলি বিশেষ ধরনের সামরিক অভিযান পরিচালনায় ইরানকে সাহায্য করছে। যেমন- নজরদারি, কৌশলগত আক্রমণ এবং হামলার সময় সৈন্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ড্রোনগুলির মাধ্যমে ইরান বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে, যা তাদের বাহিনীর জন্য হুমকি ছাড়াই শত্রু অবস্থান ধ্বংস করতে সহায়ক। এর মধ্যে রয়েছে ড্রোন ব্যবহার করে ছোট আক্রমণ চালানো, বিশেষ অপারেশন করা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান নিশ্চিত করা।
ড্রোনের মাধ্যমে একদিকে আক্রমণ চালানো সহজ হয়। অন্যদিকে এরা প্রশিক্ষণ বা কমান্ডো মিশনেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এভাবে, ইরান তাদের বাহিনীকে প্রতিরোধের বাহিনী ছাড়াই আক্রমণ পরিচালনা করতে সক্ষম করেছে।
ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধাস্ত্র বহন –
ইরান তাদের ড্রোনগুলোকে শুধু নজরদারি বা তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করে না। বরং এগুলিকে ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র বহনের জন্যও ব্যবহার করছে। বিশেষ ধরনের ড্রোনে ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত করে শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হচ্ছে। ইরান বিভিন্ন ধরণের ড্রোন তৈরি করেছে যেগুলি ক্ষেপণাস্ত্র বা বোমা বহন করে এবং শত্রুর শক্তি ধ্বংস করতে সক্ষম।
এই ড্রোনগুলি সাধারণত উচ্চ উচ্চতায় উড়ে এবং তাদের অল্প সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম। এর মাধ্যমে ইরান সরাসরি বিমান বা মিসাইল হামলার তুলনায় সস্তা এবং কার্যকরভাবে শত্রুর ক্ষতি করতে পারছে।
ড্রোন ইরানকে বৃহৎ আক্রমণ পরিচালনা করার ক্ষমতা দেয়। যেখানে একাধিক ড্রোন একযোগভাবে শত্রুর অবস্থান লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাতে পারে। এই “ফ্লাড আক্রমণ” কৌশল, যেখানে একাধিক ড্রোন একসাথে আক্রমণ করে শত্রুর প্রতিরক্ষা ভাঙার চেষ্টা করে, ইরানকে যুদ্ধের ক্ষেত্রে একটি নতুন সুবিধা দিয়েছে। এই কৌশলের মাধ্যমে, ইরান একযোগে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করতে পারে এবং শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করে দেয়।
এছাড়াও ইরান এই ড্রোনগুলিকে বড় আক্রমণের আগে শত্রুর অবস্থান বুঝে নিতে ব্যবহার করে। যার মাধ্যমে তারা সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করে এবং সফল আক্রমণ চালায়।
বিমান বাহিনীর সম্পূরক হিসাবে ড্রোন-
ফাইটার জেট বা অন্যান্য বিমানের তুলনায় ড্রোন আরও সস্তা এবং দ্রুত ব্যবহারযোগ্য এবং তা দীর্ঘ সময় ধরে উড়ে যেতে সক্ষম। বিমান বাহিনীর বড় ধরনের অপারেশনের জন্য ড্রোনগুলো এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পূরক হিসেবে কাজ করে। ইরান ড্রোন ব্যবহার করে তাদের বিমান বাহিনীর কার্যক্রম আরও কার্যকরী এবং সাশ্রয়ী করে তুলছে। পাশাপাশি, তারা বিমান বাহিনীর মধ্যে ড্রোন ব্যবহার করে বিভিন্ন সেনাবাহিনীর জন্য বিশেষ অংশগ্রহণ করতে পারছে, যা দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ পরিচালনায় সহায়ক।
ইরান যে পরিমাণ ড্রোন উৎপাদন এবং ব্যবহার করছে, তা শুধু তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নয় বরং একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে গড়ে উঠেছে। ড্রোন প্রযুক্তি ইরানকে শক্তিশালী আক্রমণাত্মক ক্ষমতা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ দিয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে যখন ইরান অন্যান্য আধুনিক অস্ত্র এবং প্রযুক্তি অর্জনে সীমাবদ্ধ ছিল। তখন ড্রোন তাকে আত্মনির্ভরশীল করতে সহায়ক হয়েছে, আর এর মাধ্যমে তারা কম খরচে যুদ্ধের ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকরী আক্রমণ চালাতে সক্ষম হয়েছে।
ইরানের ড্রোনগুলি শুধু আক্রমণাত্মক অস্ত্র হিসেবে নয়। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি এবং বিশেষ ধরনের সামরিক অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় ইরান তার ড্রোনগুলোকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করছে। যা তাকে শুধু নিজের ভূখণ্ডে নয় বরং আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অতএব, ইরান যে ড্রোন প্রযুক্তিকে এত গুরুত্ব দিয়ে তৈরি এবং ব্যবহার করছে। তা তার সামরিক কৌশল, আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য এবং আন্তর্জাতিক অবস্থানের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও উন্নত এবং কার্যকরী হবে। যা ইরানকে তার নিরাপত্তা এবং কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে আরো সক্ষম করবে।