Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Thu, Jul 17, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • খেলা
    • প্রযুক্তি
    • বিনোদন
    • মতামত
    • সাহিত্য
    • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » ইরান দখল অসম্ভব কেন?
    আন্তর্জাতিক

    ইরান দখল অসম্ভব কেন?

    নাহিদNovember 8, 2024Updated:November 8, 2024
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    ইরান মধ্যপ্রাচ্যের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র। তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, সামরিক শক্তি এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্ব অর্জন করেছে। যদিও বিশ্বশক্তির কিছু দেশ ইরানকে কৌশলগতভাবে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছে। তবে দেশটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এবং প্রাকৃতিক বাধাগুলি ইরানকে এক শক্তিশালী দুর্গে পরিণত করেছে।

    ইতিহাসের পাঠে আমরা দেখেছি যে, ইরানকে দখল করা কখনোই সহজ ছিল না। দেশটির বিস্তৃত ভূখণ্ড, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী এবং প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতাগুলো বিদেশি আগ্রাসনের জন্য অসীম বাধা সৃষ্টি করেছে।

    এই প্রতিবেদনটি ইরান দখল অসম্ভব কেন, তার নানা দিক ভূ-রাজনৈতিক কৌশল, সামরিক শক্তি, প্রাকৃতিক বাধা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার উপর আলোকপাত করবে। এবং দেখাবে কেন ইরানকে পুরোপুরি দখল করা বিশ্বের কোনো শক্তির জন্যই এক অবাস্তব প্রচেষ্টা।

    ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান-

    ইরান মধ্যপ্রাচ্যের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি দেশ। যার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে অপরিসীম। এটি তিনটি প্রধান অঞ্চল- মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থান করছে।

    ইরানের সীমান্তে রয়েছে ৭টি দেশ- আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, তুরস্ক, ইরাক, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং পারস্য উপসাগর। এর ভৌগোলিক অবস্থান শুধুমাত্র আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিকভাবেও বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

    এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে তেল ও গ্যাস ইরানকে বিশ্ব বাণিজ্য ও শক্তি বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।

    তবে, ইরানের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব শুধু তার প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে নয় বরং এর ভূ-সামরিক অবস্থান এবং কৌশলগত ভূমিকার জন্যও।

    ইরান পারস্য উপসাগরের দক্ষিণে অবস্থিত, যা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তেল রপ্তানি পথ হিসেবে পরিচিত। পারস্য উপসাগর দিয়েই বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেল রপ্তানি করা হয় এবং ইরান নিজেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশ।

    এই উপসাগরকে কেন্দ্র করে ইরানের অবস্থান বিশ্ব শক্তিগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের অধীনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ তেলক্ষেত্র ও রপ্তানি পথ বিশ্বের শক্তির বাজারে একটি কৌশলগত প্রভাব তৈরি করে।

    এছাড়াও ইরান পারস্য উপসাগরের পাশেই থাকা একাধিক তেল রপ্তানি দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে, তাদের জন্যও একটি কৌশলগত সহযোগী হিসেবে কাজ করে।

    যেমন- ইরানের তেল রপ্তানি রুটে বিপদ ঘটলে এর ফলস্বরূপ বিশ্ব তেল বাজারে বিপুল মূল্যবৃদ্ধি বা অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এই কারণে ইরান বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর জন্য একটি অপরিহার্য কৌশলগত অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    ইরান তার অবস্থান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি আরব বিশ্ব এবং কুর্দি জনগণের মধ্যে প্রতিযোগিতা, শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব এবং বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এক শক্তিশালী অবস্থান ধারণ করেছে। ইরান শিয়া মুসলিম বিশ্বের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এটির কৌশলগত প্রভাব বিস্তার করা বিরাট প্রভাবশালী।

    বিশেষ করে- সিরিয়া, লেবানন, ইরাক এবং ইয়েমেন এই সব দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইরান এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে। ইরান তার প্রভাবিত শিয়া গোষ্ঠীগুলিকে রাজনৈতিক এবং সামরিকভাবে সহায়তা প্রদান করে, যা মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা বা শান্তির জন্য একটি প্রধান ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।

    উদাহরণস্বরূপ, হিজবুল্লাহ (লেবানন), হাউথি (ইয়েমেন) এবং ইরাকের শিয়া গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীগুলি ইরান থেকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সমর্থন পেয়ে থাকে, যা তাদেরকে আঞ্চলিক রাজনৈতিক উত্তেজনায় শক্তিশালী করে তোলে।

    তাছাড়া ইরান সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকারকে শক্তিশালী সমর্থন দিয়েছে। যার ফলে ইরান সন্ত্রাসবাদ এবং আন্তর্জাতিক সামরিক আক্রমণের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক নিরাপত্তার ভূমিকা পালন করছে। এর মাধ্যমে ইরান তার ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবকে শুধু মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখে না বরং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতেও তা প্রভাব বিস্তার করে।

    মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া এবং সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে বিদ্যমান ধর্মীয় বিভাজনও ইরানের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে গুরুত্ব প্রদান করেছে। ইরান যেহেতু শিয়া মুসলিম রাষ্ট্র, সে কারণে সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর জন্য একটি শক্তিশালী কৌশলগত প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    বিশেষত সৌদি আরব, যে দেশটি সুন্নি মুসলিমদের নেতৃত্ব প্রদান করে। ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে এক শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। এই বিভাজন শুধু ধর্মীয় নয়, এটি একটি ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বয়ে আনে। যেখানে দুই শক্তির মধ্যে সংঘর্ষ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রতিযোগিতা বিশ্ব রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলছে।

    ইরানের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান শুধু আঞ্চলিক পর্যায়েই নয়, বিশ্ব মঞ্চে আন্তর্জাতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। ইরান এমন একটি অবস্থানে রয়েছে যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম শক্তিগুলোর কৌশল নির্ধারণে প্রভাবিত হয়। ইরান তার ভূ-রাজনৈতিক শক্তির মাধ্যমে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জোট ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করে এবং এটি একটি কৌশলগত যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। ইরান বিশেষকরে পারমাণবিক কর্মসূচি এবং তার তেল ও গ্যাস রপ্তানি পথের কারণে, আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর কূটনৈতিক আলোচনায় অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলি যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাদের নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে ইরানকে অবজ্ঞা করতে পারে না।

    তাই ইরানের অবস্থান যে শুধু আঞ্চলিক প্রভাবই সৃষ্টি করে না বরং আন্তর্জাতিক সমঝোতা, পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এবং শক্তির বাজারে তার ভূমিকায় বিশ্ব রাজনীতিতে ইরান একটি শক্তিশালী ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।

    শক্তিশালী সামরিক ক্ষমতা-

    ইরান একটি শক্তিশালী এবং দক্ষ সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছে। যা তাকে বিদেশি আগ্রাসন এবং আঞ্চলিক সংঘাতের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা প্রদান করে। এই সামরিক শক্তি শুধু ঐতিহ্যগত সেনাবাহিনীর ওপর ভিত্তি করে নয়। বরং আধুনিক প্রযুক্তি এবং কৌশলগত প্রস্তুতির মাধ্যমে দেশটি তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অব্যাহত রাখছে। ইরানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী এবং তার প্রতিরক্ষা কৌশল বিদেশি শক্তির জন্য ইরান দখলকে প্রায় অসম্ভব করে তোলে।

    ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারি গার্ড কোর (IRGC)-

    ইরানের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারি গার্ড কোর (IRGC) বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

    ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর প্রতিষ্ঠিত এই বাহিনী রাষ্ট্রের সশস্ত্র শাখার অংশ হিসেবে কাজ করে। এটি শুধুমাত্র দেশের প্রতিরক্ষা নয়, ইরানের বৈশ্বিক রাজনৈতিক এবং সামরিক কৌশলগুলোকেও পরিচালনা করে।

    IRGC-এর একটি বিশেষ শাখা কুদস ফোর্স, যা ইরানের আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সামরিক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয়। কুদস ফোর্সের মাধ্যমে ইরান সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন, ইরাক এবং অন্যান্য অঞ্চলে তার প্রভাব বিস্তার করেছে, যা বিদেশি শক্তির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

    IRGC শুধু একটি সেনা বাহিনী নয়। এটি ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আঞ্চলিক সংঘর্ষ এবং গোপনীয় অপারেশনগুলো পরিচালনা করে। এই বাহিনীর দক্ষতা এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিদেশি শক্তির জন্য ইরান দখলকে অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছে।

    সামরিক শক্তি এবং আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র-

    ইরান তার সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণের দিকে বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। দেশটি নিজস্ব মিসাইল এবং অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন করে, যা তার সামরিক সক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে শক্তিশালী করেছে। ইরান একটি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ব্যালিস্টিক মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল এবং আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেম। ইরান তার ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা প্রাথমিকভাবে আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ। বিশেষত ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে ব্যবহার করে।

    বিশেষভাবে ইরান উন্নত শহীদ সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র, ফাতেহ এবং শাহাব সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে গর্বিত। এই অস্ত্রগুলি ইরানকে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সক্ষমতা প্রদান করে, যা বিদেশি বাহিনীকে আক্রমণের আগে ইরানকে শক্তিশালী করে তোলে। ইরানের ফতেহ মিসাইল ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম এবং এটি শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত হানতে পারে।

    বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনী-
    ইরান তার বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনীকেও শক্তিশালী করেছে। ইরান-ইরাক আক্রমণ (১৯৮০-৮৮) থেকে শিখে নিজস্ব বোমারু বিমান, ফাইটার জেট এবং আধুনিক যুদ্ধজাহাজ তৈরি করেছে। ইরানের বিমান বাহিনী বিমান যুদ্ধ এবং নজরদারি ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ। তাদের বিমানগুলি ইরানের আকাশসীমা রক্ষা করতে সক্ষম।

    ইরান তার নৌবাহিনীকেও শক্তিশালী করেছে, যা পারস্য উপসাগর এবং হরমুজ প্রণালীতে অত্যন্ত সক্রিয়। আইআরজি সি (IRGC Navy) এবং কর্মী নৌবাহিনী অঞ্চলীয় জলসীমায় নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। ইরানের নৌবাহিনী, বিশেষত ক্ষেপণাস্ত্রবাহী দ্রুত চলাচলকারী ক্ষুদ্র জাহাজ ও সাবমেরিন ব্যবহার করে সমুদ্রসীমায় তার কৌশলগত প্রভাব জোরালো করেছে।

    পারস্য উপসাগরের মতো কৌশলগত জলসীমায় যে কোনো বিদেশি সেনা শক্তির উপস্থিতি চ্যালেঞ্জ করতে ইরান তার নৌবাহিনীকে তীক্ষ্ণভাবে প্রস্তুত রেখেছে। ২০১০ সালে ইরান এমন এক ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করেছে যা সমুদ্রপথে বিদেশি যুদ্ধজাহাজের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। এতে ইরান তার জলপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিদেশি শক্তির মোকাবেলায় একটি শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে।

    ড্রোন এবং সাইবার ক্ষমতা-
    ইরান আধুনিক প্রযুক্তির দিকে আরো একধাপ এগিয়ে গেছে, বিশেষ করে ড্রোন এবং সাইবার প্রযুক্তিতে। ইরান ড্রোন প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে এবং বিভিন্ন ধরনের সশস্ত্র ড্রোন তৈরি করেছে। যা তার আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ইরান তার ড্রোনগুলো ব্যবহার করে ঘনঘন শত্রু লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। বিশেষত ইরাক, সিরিয়া এবং ইয়েমেনে।

    এছাড়া ইরান তার সাইবার প্রতিরক্ষা সক্ষমতাও শক্তিশালী করেছে। ইরান ব্যাপকভাবে সাইবার আক্রমণ চালানোর জন্য পরিচিত, বিশেষ করে সেইসব দেশ বা গোষ্ঠী যা তার বিরুদ্ধে রয়েছে। ইরান তার সাইবার বাহিনীকে আন্তর্জাতিকভাবে আক্রমণের জন্য ব্যবহার করতে সক্ষম এবং বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে সাইবার আক্রমণ চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা প্রতিরক্ষা অবকাঠামোকে অকার্যকর করতে পারে। এটি ইরানকে সশস্ত্র সংঘর্ষ ছাড়াও আন্তর্জাতিক কৌশলে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

    পারমাণবিক অস্ত্রের প্রসার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ইরানের সামরিক শক্তির জন্য। যদিও ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। ইরান দাবি করেছে যে তার পারমাণবিক উন্নয়ন শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে এবং তা শুধুমাত্র শক্তি উৎপাদনের জন্যই ব্যবহার করবে। তবে, তার পারমাণবিক ক্ষমতা উন্নত করার জন্য যে প্রচেষ্টা চলছে, তা বিদেশি শক্তির জন্য একটি বড় সংকেত।

    বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো মনে করে যে, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা তার আঞ্চলিক শক্তি আরও বৃদ্ধি করবে এবং এ কারণে তা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে। ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হ। তবে এটি তার নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং বিদেশি শক্তির জন্য ইরান দখল বা আক্রমণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।

    প্রাকৃতিক বাধা ও ভূ-খণ্ড-

    ইরানের ভূ-খণ্ডের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে তার পর্বতশ্রেণী, মরুভূমি এবং উঁচু এলাকা, ইরানকে একটি স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা শক্তি প্রদান করেছে। এই প্রাকৃতিক বাধাগুলো কেবল দেশটির নিজস্ব নিরাপত্তা নয় বরং বিদেশি শক্তির জন্য দেশটিতে প্রবেশ বা দীর্ঘস্থায়ী আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা আরও কঠিন করে তোলে।

    ইরানের ভূ-রাজনৈতিক প্রাকৃতিক পরিবেশ বিদেশি বাহিনীর জন্য কার্যকর প্রতিরোধ তৈরি করে এবং যেকোনো সামরিক আগ্রাসনকে চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। এখানে আমরা ইরানের ভূখণ্ডের প্রধান প্রাকৃতিক বাধাগুলো এবং সেগুলোর সামরিক গুরুত্ব বিশ্লেষণ করব।

    এলবোরজ ও জাগরোস পর্বতমালা-

    ইরানের ভূখণ্ডে দুটি প্রধান পর্বতমালা রয়েছে- এলবোরজ এবং জাগরোস পর্বত। এই পর্বতমালাগুলি ইরানের উত্তর এবং পশ্চিম অঞ্চলে বিস্তৃত। তাদের শৃঙ্গগুলো উচ্চতর এবং কঠিন প্রাকৃতিক বাধা সৃষ্টি করে।

    এলবোরজ পর্বতমালা ইরানের উত্তরে, ক্যাসপিয়ান সাগরের পাশে এই এলবোরজ পর্বতমালা অবস্থিত। এই পর্বতশ্রেণী ইরানের সীমানাকে দক্ষিণে রুক্ষ মরুভূমি ও সমভূমির সাথে বিচ্ছিন্ন করে। ফলে দেশটির উত্তর সীমান্তে যেকোনো আক্রমণ কঠিন হয়ে ওঠে।

    এলবোরজ পর্বতমালার উচ্চতা ৫হাজার মিটার (১৬ হাজার ফুট) পর্যন্ত যেতে পারে এবং এই পাহাড়গুলি একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে কাজ করে। আক্রমণকারীদের জন্য এসব পাহাড়ে সেনাবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হওয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে শীতকালে তুষারপাত এবং তীব্র শীতের কারণে।

    জাগরোস পর্বতমালা ইরানের পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে থাকা জাগরোস পর্বতমালা। যার উচ্চতা ৪ হাজার মিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা দেশটির প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাগরোস পর্বত এলাকার সংকীর্ণ উপত্যকাগুলি এবং দুর্গম শৃঙ্গগুলি বিদেশি বাহিনীর জন্য প্রবাহিত হওয়া কঠিন করে তোলে। এর সঙ্গে আছে অস্থির ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের প্রভাবও। যা অঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

    এই দুই পর্বতমালা মিলে ইরানের পশ্চিম, উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব সীমান্তে আক্রমণকারী বাহিনীর জন্য সশস্ত্র সংঘর্ষে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পরিবহন এবং যুদ্ধ সরঞ্জাম স্থানান্তর অত্যন্ত কঠিন। যার ফলে দেশের উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী সেনা উপস্থিতি স্থাপন করা শক্ত হয়ে পড়ে।

    মরুভূমি এবং ভূমির বৈচিত্র্য-

    ইরান একটি ভূখণ্ডের মধ্যে বিস্তৃত মরুভূমি এবং উচ্চতর ভূমির প্রাচুর্য রয়েছে। কাভির মরুভূমি এবং দাস্ট-এ-লুত মরুভূমি, ইরানকে একটি কঠিন পরিবেশ প্রদান করে। মরুভূমি এলাকায় জনবসতি কম এবং সাপ্লাই লাইন স্থাপন বা রক্ষণা-খাল করার জন্য কঠিন জায়গা থাকে।

    কাভির মরুভূমি ইরানের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। কাভির মরুভূমি দেশের সেনাবাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের একটি সুবিধাজনক এলাকা হলেও, বাইরের বাহিনীর জন্য এটি এক ভয়ানক প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। অবস্থিতির কারণে বাহিনী এখানে অদৃশ্য হতে পারে এবং পরিবহনও অত্যন্ত কঠিন। মরুভূমির তাপমাত্রা এবং বালি উপাদান যুদ্ধের জন্য এক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। যা আক্রমণকারী বাহিনীর যন্ত্রপাতি এবং বাহিনীর জন্য অত্যন্ত ক্লান্তিকর।

    দাস্ট-এ-লুত মরুভূমি, এটি বিশ্বের এক অত্যন্ত শুষ্ক এবং অতি গরম মরুভূমি। যার ভূমি একেবারে পাথুরে ও বালির গর্তে পরিপূর্ণ। এখানে সেনাবাহিনী, বিশেষ করে ভারী যানবাহন, কঠিনভাবে চলতে পারে না এবং পরিবহণের জন্য অবকাঠামো স্থাপন করা প্রায় অসম্ভব। এই মরুভূমি, ইরানকে একটি প্রাকৃতিক দুর্গ হিসেবে রূপান্তরিত করেছে। যেখানে বিদেশি বাহিনীর জন্য অবাধ যাতায়াত এবং দীর্ঘমেয়াদী অবস্থান অত্যন্ত দুরূহ।

    পারস্য উপসাগর এবং হরমুজ প্রণালী-

    ইরান দক্ষিণে পারস্য উপসাগর এবং হরমুজ প্রণালী এর উপকূলে অবস্থিত। যা দেশটির সামরিক এবং কৌশলগত গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দেয়। পারস্য উপসাগর বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তেল রপ্তানি পথ এবং হরমুজ প্রণালী দিয়ে আন্তর্জাতিক তেল রপ্তানির বড় একটি অংশ চলে।

    এলাকা নিয়ন্ত্রণের জন্য বহির্বিশ্বের শক্তিগুলি এই অঞ্চলে প্রবেশ করতে চাইলেও ইরান তার নৌবাহিনী এবং সাগরপথে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করেছে। আইআরজি সি (IRGC) নৌবাহিনী এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা বাহিনী এখানকার সমুদ্রসীমায় কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ইরান হরমুজ প্রণালীতে যুদ্ধ জাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, সাবমেরিন এবং সমুদ্রগামী ড্রোন দিয়ে বাহিনীর সক্ষমতা বাড়িয়েছে, যা বিদেশি শক্তির জন্য একটি বড় কৌশলগত প্রতিবন্ধক।

    বিস্তৃত এলাকা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা-

    ইরান একটি বৃহৎ দেশ, যার আয়তন প্রায় ১.৬৪ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। এমন বিশাল ভূখণ্ডের মধ্যে আক্রমণকারী বাহিনীর জন্য একটি স্থায়ী সামরিক অবকাঠামো গড়ে তোলা অত্যন্ত কঠিন। দেশটির ভৌগোলিক বৈচিত্র্য, বিভিন্ন প্রকৃতির এলাকা, প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতা এবং বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখা ইরানকে বিদেশি বাহিনীর দখল থেকে রক্ষা করে।

    এছাড়া, ইরান তার এলাকাভিত্তিক প্রকৃতির কারণে গোপন সেনা আক্রমণ, গেরিলা যুদ্ধ এবং স্থানীয় প্রতিরোধ কৌশল কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম। ইরানের ভূখণ্ডের বিচ্ছিন্নতা আক্রমণকারী বাহিনীর জন্য পরিবহন ও লজিস্টিক অপারেশন জটিল করে তোলে, যা দীর্ঘমেয়াদী আধিপত্য স্থাপন করতে বাধা সৃষ্টি করে।

    ইরান তার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা এবং আঞ্চলিক মিত্রদের সমর্থনসহ একটি কার্যকর দুর্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর পর্বতশ্রেণী, মরুভূমি এবং কঠিন পরিবেশে অবস্থিত ভূখণ্ড বিদেশি বাহিনীর জন্য এক বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যা দখল বা দীর্ঘমেয়াদী আধিপত্য স্থাপনকে প্রায় অসম্ভব করে তোলে।

    উপরন্তু ইরান তার শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র এবং আঞ্চলিক মিত্রদের মাধ্যমে দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করেছে।

    অতএব, ইরানকে দখল করা শুধু কৌশলগতভাবে কঠিন নয়, এটি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ভূ-রাজনৈতিক দুর্গ হিসেবে তার অবস্থানকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিদেশি শক্তির জন্য ইরানকে পুরোপুরি দখল করার প্রচেষ্টা কখনোই বাস্তবসম্মত নয়। কারণ এর পিছনে রয়েছে সশস্ত্র প্রতিরোধ, প্রাকৃতিক বাধা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জটিলতা। সুতরাং ইরান একটি এমন দেশ, যা সহজে দখল হতে পারে না। এটি তার শক্তি, প্রস্তুতি এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের মিশেলে এক অবাধ্য দুর্গ।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    আন্তর্জাতিক

    বাংলা ইস্যুতে বিজেপির সমালোচনায় মমতা

    July 17, 2025
    আন্তর্জাতিক

    সৌদি আরবে মুদি দোকানে তামাক বিক্রি নিষিদ্ধ

    July 17, 2025
    আন্তর্জাতিক

    গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো নিহত ৯৪

    July 17, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025

    দেশের অর্থনৈতিক স্থবিরতা কি কেটে উঠা সম্ভব?

    অর্থনীতি May 29, 2025

    বাজেটের স্বাধীনতা: বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অন্যতম নিয়ামক

    আইন আদালত June 1, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Privacy Policy
    • Comment Policy
    • About Us
    • Contact Us
    • Privacy Policy
    • Comment Policy

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2024 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.