সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে আলেপ্পো ও ইদলিব প্রদেশ নতুন করে বড় ধরনের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো দেশটির সরকারি বাহিনীর ওপর একাধিক আক্রমণ চালিয়ে কিছু এলাকা দখল করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটিই অন্যতম বড় আকারের হামলা।
সংঘর্ষে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি-
বিবিসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এ পর্যন্ত উভয় পক্ষের ১৮০ জনেরও বেশি যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। সরকারি বাহিনী ও রাশিয়ার বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও অন্তত ১৯ জন বেসামরিক নাগরিক। লন্ডনভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, নিহত বিদ্রোহীদের মধ্যে ১২১ জনই ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর সদস্য। অন্যদিকে, সরকারি বাহিনীর ৪০ জন সেনাসদস্য এবং তাদের সহযোগী ২১ জন মিলিশিয়া যোদ্ধার মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
অঞ্চলের দখল ও কৌশলগত পরিবর্তন-
এইচটিএস ও তাদের মিত্র গোষ্ঠীগুলো দাবি করেছে, সংঘর্ষের ফলে তারা আলেপ্পো ও ইদলিবের কয়েকটি ছোট শহর ও গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সিরিয়ান সামরিক বাহিনীও স্বীকার করেছে, তারা বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার মুখোমুখি। তবে তাদের দাবি, বিদ্রোহীদের প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে এবং তাদের বেশ বড় আকারের ক্ষতি করা হয়েছে।
বিদ্রোহীরা সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এই মহাসড়কটি রাজধানী দামেস্ক ও আলেপ্পোকে সংযুক্ত করে। এছাড়া সরকারি বাহিনীর ৪৬তম রেজিমেন্টের ঘাঁটি এবং আরও আটটি গ্রাম বিদ্রোহীদের দখলে চলে গেছে বলে জানা গেছে।
গৃহযুদ্ধের ইতিহাস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট-
২০১১ সালে সিরিয়ায় গণতন্ত্রের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের জের ধরে সংঘাতটি গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। এরপর থেকে এ যুদ্ধে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইদলিব প্রদেশ বর্তমানে বিদ্রোহীদের শেষ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, যেখানে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে অনেকেই সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
যুদ্ধবিরতি ও নতুন উত্তেজনা-
২০২০ সালে সিরিয়া সরকারের ইদলিব পুনর্দখলের চেষ্টার সময় তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। এরপর বড় পরিসরে সংঘর্ষ কমে এলেও মাঝেমধ্যেই সেখানে নতুন উত্তেজনা দেখা যায়। গোলাবর্ষণ, বিমান হামলা এবং স্থানীয় সংঘর্ষ ইদলিববাসীর জীবনে প্রতিনিয়ত ভয়াবহ সংকট তৈরি করছে।
মানবিক সংকট-
ইদলিবের এই ৪০ লাখ মানুষ, যাদের বেশির ভাগই শরণার্থী, তারা চরম মানবিক সংকটের মুখোমুখি। যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় খাদ্য, বাসস্থান এবং চিকিৎসার অভাব প্রকট। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিদ্রোহী অধ্যুষিত এই অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও সংকট সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ এখনও অনুপস্থিত।
সিরিয়ার চলমান সংঘর্ষে নতুন করে উত্থিত এই পরিস্থিতি শুধু দেশটির জন্য নয় বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্যও বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে সংঘাত নিরসনে কোনো টেকসই সমাধান আসবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত।