ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রাণের টানে ফিরতে শুরু করেছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। গাজার জনসংযোগ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অন্তত তিন লাখ মানুষ গাজায় ফিরে এসেছেন। এএফপি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, নেৎজারিম করিডোর দিয়ে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উত্তর গাজায় প্রবেশ করছেন। কেউ আসছেন ঘোড়ার গাড়িতে, কেউ বা গাধার গাড়িতে মালপত্র বোঝাই করে। পথে ধ্বংসস্তূপের মাঝে ‘গাজায় স্বাগতম’ লেখা একটি ব্যানার যেন তাদের আশা জাগাচ্ছে।
গাজার জনসংযোগ দপ্তর জানায়, ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে উত্তর গাজার বাসিন্দাদের বড় অংশটি এতদিন দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। ৪৭০ দিনের দীর্ঘ অপেক্ষার পর তারা নিজেদের এলাকায় ফিরে আসতে শুরু করেছে।
উত্তর গাজার ২২ বছর বয়সী তরুণী লামিস আল ইওয়াদি এএফপিকে বলেন, ‘আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। এতদিন মনে হয়েছিল আমি মৃত, আজ যেন নতুন করে বেঁচে উঠেছি।’
যদিও লামিসের বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, তবু তার দৃঢ় মনোভাব স্পষ্ট, ‘আমরা হাল ছাড়ব না। আবার ঘর তৈরি করব, এমনকি যদি কাদা আর বালি দিয়েও করতে হয়।’
হামাসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ফিরে আসা এই বাস্তুচ্যুতদের সাময়িক আশ্রয়ের জন্য অন্তত ১ লাখ ৩৫ হাজার তাঁবুর প্রয়োজন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় মাথা গোঁজার এই ব্যবস্থা করাও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ আগস্ট হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর ইসরায়েল গাজায় পাল্টা অভিযান শুরু করে। টানা ১৫ মাস ধরে চলা এই সংঘাতে ৪৭ হাজার ৩ শতাধিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১২ হাজার মানুষ। লাখ লাখ ফিলিস্তিনি নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজা উপত্যকায় ধীরে ধীরে মানুষ ফিরতে শুরু করলেও, সামনে রয়েছে ঘরবাড়ি পুনর্গঠন ও নতুন করে বাঁচার লড়াই। গাজার মাটিতে এখন কেবল ধ্বংসের চিহ্ন নয়, জেগে উঠেছে অদম্য মনোবল আর টিকে থাকার অঙ্গীকার।