ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরল মৃত্তিকা ধাতু সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরে তার কর্মকর্তাদের অনুমতি দেননি। এই চুক্তির শর্তাবলী মূলত যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষায় কেন্দ্রীভূত ছিল এবং বিনিময়ে ইউক্রেনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তা রাখা হয়নি। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন বর্তমান ও একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রস্তাবিত চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ পেতে চাইছিল। বাইডেন প্রশাসনের দাবি, এটি ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তার একটি প্রতিফলন এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতার অংশ হিসেবেই এটি বিবেচিত হতে পারত। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই কর্মকর্তা জানান, এতে ইউক্রেনের নিরাপত্তার বিষয়টি যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি।
একজন ঊর্ধ্বতন হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তা জেলেনস্কির এ সিদ্ধান্তকে ‘অদূরদর্শী’ বলে মন্তব্য করেছেন।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনের বিশাল পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ রয়েছে। যা মহাকাশ, প্রতিরক্ষা ও পারমাণবিক শিল্পে ব্যবহৃত হয়। ট্রাম্প প্রশাসন আগে থেকেই এই খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যাতে চীনের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করা যায়। তবে জেলেনস্কি স্পষ্টভাবে বলেছেন, যেকোনো খনিজসম্পদ ব্যবহারের বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা যুক্ত থাকতে হবে, যা ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধে সহায়তা করবে।
গত শনিবার জার্মানির মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি আমার মন্ত্রীদের এই চুক্তি স্বাক্ষরের অনুমতি দিইনি- কারণ এটি ইউক্রেনের স্বার্থ রক্ষায় যথেষ্ট নয়।’
তিনি আরো জানান, মার্কিন প্রস্তাবিত নথিতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা ছিল না, যা তার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে, বুধবার মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট কিয়েভ সফর করলেও জেলেনস্কি তার কর্মকর্তাদের ওই নথি স্বাক্ষর না করার কারণ নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে বলেন, এটি কার্যত একটি ঔপনিবেশিক চুক্তি, যা ইউক্রেনের জন্য ক্ষতিকর।
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজেস চুক্তির বিষয়ে নিশ্চিত কোনো মন্তব্য করেননি। তবে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনকে যে সুযোগ দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করাটা স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত।’
তিনি আরো জানান, যুক্তরাষ্ট্রের খনিজসম্পদ সংক্রান্ত চুক্তি ইউক্রেনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি মার্কিন করদাতাদের অর্থ পুনরুদ্ধারের একটি সুযোগ তৈরি করবে।
মিউনিখ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মূলত ইউক্রেনের সঙ্গে সম্ভাব্য অংশীদারিত্ব এবং খনিজ অনুসন্ধান নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে ইউক্রেনের খনিজ ক্ষেত্রগুলোর সম্ভাব্য মূল্যায়ন এখনো সম্পন্ন হয়নি। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্র অপর্যাপ্ত অনুসন্ধানের আওতায় রয়েছে বা যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি অবস্থিত।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রুশ আগ্রাসন চলাকালীন এসব খনিজ ক্ষেত্রের সুরক্ষা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। মিউনিখ সম্মেলনে এ নিয়ে আলোচনা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
একজন ঊর্ধ্বতন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা জানান, যেকোনো চুক্তি অবশ্যই ইউক্রেনের আইনের আওতায় হতে হবে এবং তা জনগণের স্বার্থ রক্ষায় উপযোগী হতে হবে।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এখন একটি পাল্টা প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে, যা শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
জেলেনস্কি বলেন, ‘যদি আমরা কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে চাই, তবে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে এটি কার্যকর হবে এবং আমাদের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য উপকারী হবে।’