ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ চুক্তি নিয়ে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছেছে। এই চুক্তি ইউক্রেনের জন্য কৌশলগত গুরুত্ব বহন করছে, যা প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ওয়াশিংটনের সমর্থন নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। বিশেষত: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে দ্রুত সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রয়টার্সের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চুক্তির খসড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বা সামরিক সহায়তার বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। তবে এতে ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে ‘মুক্ত, স্বাধীন ও নিরাপদ’ হিসেবে দেখতে চায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সমঝোতার মাধ্যমে ভবিষ্যতে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্য-
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শুক্রবার ওয়াশিংটনে এসে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করতে চান। যদিও সম্প্রতি দুই নেতার মধ্যে কিছু কটূক্তি বিনিময় হয়েছে। তবু ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই চুক্তির ফলে ইউক্রেন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সহায়তা পাবে।
ট্রাম্প আরো বলেন, যুদ্ধবিরতি হলে ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হতে পারে। তবে রাশিয়া এমন কোনো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ ও চুক্তির গুরুত্ব-
চুক্তির অন্যতম প্রধান দিক হলো, এটি ইউক্রেনের বিশাল খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার সহজতর করবে। ট্রাম্পের ভাষায়, আমরা নিরাপত্তা চাই এবং আমেরিকান করদাতারা তাদের বিনিয়োগের প্রতিদান পাবেন।
প্রাথমিকভাবে জেলেনস্কি চুক্তির খসড়ায় স্বাক্ষর করতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন, কারণ এতে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা যথাযথভাবে সংযোজিত ছিল না।
চুক্তির শর্তাবলি ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা-
এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন একটি পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল গঠন করবে, যা ইউক্রেনের খনিজ, হাইড্রোকার্বন ও অন্যান্য আহরণযোগ্য সম্পদ থেকে আয় সংগ্রহ করে পুনর্বিনিয়োগ করবে। ইউক্রেন এই তহবিলে তার আয়ের ৫০ শতাংশ জমা দেবে, যা ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ও ইউক্রেনের লাভ-
এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে। তবে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের বিশ্লেষক স্কট অ্যান্ডারসন এই চুক্তিকে “দস্যুতা” বলে মনে করছেন।
অন্যদিকে, ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের সমর্থন নিশ্চিত করতে এটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় প্রতিক্রিয়া-
ট্রাম্পের রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা এবং ইউক্রেন ও ইউরোপের নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করার নীতি ইউরোপীয় নেতাদের উদ্বেগের কারণ হয়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্প জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ হিসেবে অভিহিত করে দ্রুত শান্তি চুক্তির আহ্বান জানান, যা জেলেনস্কি ‘ভুল তথ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেন।
ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ ও বৈশ্বিক প্রভাব-
বিশ্বব্যাপী ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষত: বৈদ্যুতিক যানবাহন ও পারমাণবিক চুল্লির ব্যাটারির জন্য ব্যবহৃত গ্রাফাইটের বিশাল মজুদ দেশটিতে রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন চিহ্নিত ৩৪টি কৌশলগত খনিজের মধ্যে ২২টির মজুদ ইউক্রেনে রয়েছে।
এই চুক্তি ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ রক্ষা করতে সহায়তা করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে।