উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন দেশটির কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার তত্ত্বাবধান করেছেন এবং পারমাণবিক হামলার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তার দাবি, এই প্রস্তুতি উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকরভাবে নিশ্চিত করবে। সরকারি সংবাদ সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে।
কেসিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শত্রুদের সতর্কবার্তা দিতেই এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। অভিযোগ করা হয়েছে, শত্রুপক্ষ সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি করছে এবং তা আরও উসকে দিচ্ছে।
কিম জং উন বলেছেন, শক্তিশালী হামলার সক্ষমতাই নিখুঁত প্রতিরোধ এবং প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। তিনি আরও বলেন, শত্রুর বিরুদ্ধে হামলার প্রস্তুতি নেওয়া তাদের জন্য শুধু কৌশলগত পদক্ষেপ নয় বরং এটি একটি ‘দায়বদ্ধ কাজ’। নির্ভরযোগ্য পারমাণবিক শক্তির মাধ্যমে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা স্থায়ীভাবে রক্ষা করা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক বাহিনীর দায়িত্ব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কেসিএনএর তথ্যমতে, কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাটি চালানো হয় গত বুধবার, কোরীয় উপদ্বীপের পশ্চিম উপকূলে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয় এবং তা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানে।
উত্তর কোরিয়ার এই পরীক্ষা নজরদারিতে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। শুক্রবার দেশটির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা বুধবার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের প্রস্তুতির লক্ষণ শনাক্ত করেছিল। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে সাগরে বেশ কয়েকটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত উত্তর কোরিয়ার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। তবে দেশটি যখন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে, তখন আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার ওপর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা নিষিদ্ধ করেছে এবং পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির কারণে দেশটির ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়ে সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কারণ এগুলো সাধারণত স্বল্প পাল্লার হয়ে থাকে এবং সেগুলোর প্রতি আন্তর্জাতিক নজরদারিও তুলনামূলক কম।
তবে সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়া বেশ কয়েক বছর ধরে কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মাধ্যমে পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনের সক্ষমতা অর্জন করাই তাদের লক্ষ্য। যা ভবিষ্যতে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি করতে পারে।