রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে জি-সেভেন (জি-৭) গোষ্ঠী। এই প্রস্তাবে সম্মত না হলে রাশিয়ার ওপর আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে পশ্চিমা জোটটি।
কানাডায় শুক্রবার অনুষ্ঠিত জি-৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন শেষে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া অস্ত্রবিরতির প্রস্তাবে রাশিয়ার সাড়া দেওয়ার এখনই সময়। সমতার ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়ে তা পূর্ণভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।
জি-৭ নেতারা আরো স্পষ্ট করে দেন, রাশিয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে তাকে আরো মূল্য দিতে হবে- যার মধ্যে রয়েছে নতুন নিষেধাজ্ঞা, তেলের বাজারে রাশিয়ার প্রভাব কমানো এবং ইউক্রেনকে আরো সামরিক ও কৌশলগত সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি বলেন, আমরা সবাই নিশ্চিত, এই অস্ত্রবিরতির প্রস্তাবে ইউক্রেনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এখন রাশিয়ার জবাবের অপেক্ষা।
তিনি বলেন, ইউক্রেন শান্তির সুযোগ তৈরি করেছে, এখন পুতিনের ওপর নির্ভর করছে সেই সুযোগ কাজে লাগবে কি না।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিও একই সুরে বলেন, কোনো শর্ত ছাড়াই এখনই অস্ত্রবিরতির সময়। ইউক্রেন তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। বল এখন রাশিয়ার কোর্টে।
তিনি আরও জানান, যুদ্ধবিরতির পক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ এবং ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত জি-৭ গোষ্ঠী।
তবে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যাচ্ছে, ওয়াশিংটনের প্রস্তাবে এখনই সম্মতি দিতে প্রস্তুত নয় মস্কো।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, অস্ত্রবিরতি বাস্তবায়নে এখনো বহু প্রশ্নের উত্তর বাকি রয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি রাশিয়ার এই অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রক্রিয়াটি জটিল করে তুলে আলোচনার পথ বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জি-৭ সম্মেলনের রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা চীন, ইরান, উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে উদ্ভূত বৈশ্বিক কৌশলগত চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা করেন। এই চার দেশকে ‘অশান্তির অক্ষ’ হিসেবে উল্লেখ করছেন অনেক বিশ্লেষক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ।
এছাড়া ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা, সামুদ্রিক চলাচলের স্থিতিশীলতা এবং চীনের ভূরাজনৈতিক প্রভাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
জি-৭ এর এই কৌশলগত হুঁশিয়ারিকে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে।