ইউক্রেন যখন রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান হামলার মুখে বিপর্যস্ত, তখনই এক অস্বস্তিকর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন ইউক্রেনকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ? যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব অস্ত্রের মজুত এখন সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যে আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে ব্যবহৃত মারণাস্ত্র সরবরাহ করছিল, তার কিছু চালান সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগের দুই কর্মকর্তা।
তারা জানান, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুত অনেক অস্ত্র এখনো সরবরাহ করা হয়নি বা মাঝপথে এসে বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রও।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই সংকটের মধ্যেও ইউক্রেনকে সহায়তা চালিয়ে যেতে চায়, তবে সেটি করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে এখন কৌশল বদলাতে হচ্ছে। পেন্টাগনের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সম্ভাব্য বিকল্প কৌশল ভাবতে হচ্ছে, যাতে একদিকে যেমন ইউক্রেনকে সহায়তা অব্যাহত রাখা যায়, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতাও যেন দুর্বল না হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতিবিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি এলব্রিজ কলবি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “আমরা ইউক্রেনকে সাহায্য করতে চাই — এ বিষয়ে আমাদের সংকল্প অটুট। কিন্তু একইসঙ্গে নিজেদের বাহিনীর প্রস্তুতি ও সক্ষমতাও অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। তাই এখন আমাদের কৌশল ও সরবরাহ নীতির গভীর পর্যালোচনা চলছে।”
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় এলো, যখন রাশিয়া ইউক্রেনজুড়ে হামলা আরও জোরদার করেছে। বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চল রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্বের দোনেৎস্ক ও দনিপ্রোপেত্রোভস্কে নতুন করে আরও কিছু এলাকা দখলে নিয়েছে মস্কো। একইসঙ্গে দেশজুড়ে বাড়ানো হয়েছে বিমান হামলার পরিমাণ।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একবার এবং মার্চে দীর্ঘ সময়ের জন্য ইউক্রেনে সব ধরনের অস্ত্র সহায়তা বন্ধ ছিল। পরে ট্রাম্প প্রশাসন বাইডেন আমলে অনুমোদিত সহায়তার শেষ ধাপ চালু করলেও এখন পর্যন্ত নতুন কোনো নীতিগত ঘোষণা আসেনি।
এই পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্র এখন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে এক কঠিন ভারসাম্যের লড়াইয়ে রয়েছে। একদিকে বিশ্বরাজনীতিতে নিজের অবস্থান ও মিত্রতার অঙ্গীকার, অন্যদিকে নিজস্ব সামরিক সক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কঠিন চ্যালেঞ্জ। সামনের দিনগুলোয় এই দ্বিধার মীমাংসা কীভাবে হবে, তা নজরকাড়া হতে যাচ্ছে বৈশ্বিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের জন্য।