Close Menu
Citizens VoiceCitizens Voice
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp Telegram
    Citizens VoiceCitizens Voice Sat, Nov 8, 2025
    • প্রথমপাতা
    • অর্থনীতি
    • বাণিজ্য
    • ব্যাংক
    • পুঁজিবাজার
    • বিমা
    • কর্পোরেট
    • বাংলাদেশ
    • আন্তর্জাতিক
    • আইন
    • অপরাধ
    • মতামত
    • অন্যান্য
      • খেলা
      • শিক্ষা
      • স্বাস্থ্য
      • প্রযুক্তি
      • ধর্ম
      • বিনোদন
      • সাহিত্য
      • ভিডিও
    Citizens VoiceCitizens Voice
    Home » নেপালের রাজনীতি ও তরুণ আন্দোলন: রানা শাসন থেকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
    আন্তর্জাতিক

    নেপালের রাজনীতি ও তরুণ আন্দোলন: রানা শাসন থেকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র

    নাহিদSeptember 13, 2025
    Facebook Twitter Email Telegram WhatsApp Copy Link
    নেপালের সিংহদরবার প্রাঙ্গণে আগুন জ্বলছে। এখানেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও অন্যান্য মন্ত্রণালয় অবস্থিত। ছবি: রয়টার্স
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Telegram WhatsApp Email Copy Link

    নেপালের রাজনীতিতে নাটকীয় এক মোড় এসেছে। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। যেই তরুণ প্রজন্মকে তিনি অবজ্ঞা করেছিলেন, সেই তরুণদের আন্দোলনের চাপেই তাঁকে পদ ছাড়তে হলো।

    গত রোববার রাজধানী কাঠমান্ডুতে তরুণরা দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে বড় এক বিক্ষোভের আয়োজন করে। সেদিন অলি তাঁদের উপহাস করে মন্তব্য করেছিলেন, বিক্ষোভকারীরা নিজেদের ‘জেন-জি’ বা জেনারেশন জেড মনে করেন এবং তাঁরা যা চান, তা-ই দাবি করতে পারেন।

    অলির এই মন্তব্য অনেক তরুণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এরপর থেকেই বিক্ষোভ আরও বড় আকার নিতে শুরু করে।

    অলির মন্তব্যের পরদিন সোমবার পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৯ জন নিহত হন। এই ঘটনা আন্দোলনকে আরো উত্তেজিত করে তোলে। শুধু কাঠমান্ডুতেই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে তরুণদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে রাজধানী ও প্রাদেশিক শহরগুলো।

    মঙ্গলবার পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। কয়েকজন শীর্ষ রাজনীতিবিদের বাসভবনও হামলার মুখে পড়ে। সহিংসতায় মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য পদত্যাগ করেন। শেষ পর্যন্ত অলিও তীব্র চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। সোমবার ও মঙ্গলবারের সহিংসতায় মোট ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

    নেপালের এই ঘটনাপ্রবাহ আবারো প্রমাণ করেছে, তরুণ প্রজন্মকে অবহেলা করা যায় না। যাঁদের অলি ‘জেন-জি’ বলে তুচ্ছ করেছিলেন, তাঁরাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাস্তায় নামা তরুণদের মূল দাবি ছিল—রাজনৈতিক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অকার্যকর প্রশাসনের অবসান।

    বিশ্লেষকরা বলছেন, নেপালে এই প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অত্যন্ত সক্রিয়। তারা সংগঠিত হতে জানে এবং রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ করার মতো সাহস রাখে। এ আন্দোলনে তরুণদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষও যুক্ত হন। ফলে আন্দোলন দ্রুত একটি জাতীয় স্রোতে পরিণত হয়।

    দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপট-

    এমন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেপালে নতুন নয়। দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে একের পর এক সরকার পরিবর্তন ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। তবে এবারের পরিবর্তন তরুণদের সক্রিয় ভূমিকার কারণে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

    দক্ষিণ এশিয়ায় গত কয়েক বছরে তরুণদের নেতৃত্বে গণআন্দোলনের ঢেউ দেখা গেছে। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। আবার ২০২৪ সালে বাংলাদেশেও তরুণদের নেতৃত্বে গণআন্দোলনের মুখে সরকার পতন ঘটে।

    নেপালও এখন সেই ধারাবাহিকতার অংশ হয়ে উঠেছে। ফলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।

    বিশেষজ্ঞদের মতে, নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা কেবল তিন কোটি মানুষের দেশটিকেই প্রভাবিত করবে না বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়া ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও এর প্রতিধ্বনি শোনা যাবে।

    নেপালে

    ভূরাজনীতির দিক থেকেও নেপাল গুরুত্বপূর্ণ। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ক রেখেছে। এখন রাজনৈতিক সংকট আরো গভীর হলে এই ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

    চীন ও ভারত উভয়ই নেপালে প্রভাব বিস্তারে আগ্রহী। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে এই দুই দেশ নিজেদের স্বার্থে চাপ বাড়াতে পারে। এতে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

    সামনে কী অপেক্ষা করছে?

    অলির পদত্যাগের পর নেপালে নতুন নেতৃত্ব আসবে। তবে পরিস্থিতি কতটা স্থিতিশীল হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তরুণরা এখন পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। তাদের প্রত্যাশা পূরণ না হলে অস্থিরতা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।

    বিশ্লেষকরা বলছেন, নেপালের রাজনীতিতে এখন প্রজন্মের পালাবদল স্পষ্ট। এই পরিবর্তন যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে নেপাল নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির দিকে এগোতে পারে। আর যদি তা ব্যর্থ হয়, তবে দেশ আবারো দীর্ঘ অস্থিরতার মুখে পড়তে পারে।

    ৮ সেপ্টেম্বর নেপালে হাজার হাজার তরুণ রাস্তায় নামেন। তাদের মূল অভিযোগ সরকারের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং জনগণের প্রতি অবহেলা। বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, সরকারি পদে থাকা কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত স্বার্থে পদক্ষেপ নিচ্ছেন, জনগণের হিতকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

    সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও তখন বন্ধ। এতে তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ আরো তীব্র হয়। তারা মনে করেন, তথ্য ও যোগাযোগের স্বাধীনতা সীমিত করা হয়েছে।

    প্রথম দিনের বিক্ষোভে কিছু ব্যক্তি ব্যারিকেড ভেঙে সংসদ কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়েন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রথমে গুলি চালান, কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোঁড়েন এবং জলকামান ব্যবহার করেন। এতে অন্তত ১৯ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই তরুণ। এই ঘটনা পুরো দেশে তরুণদের ক্ষোভকে আরো বাড়িয়ে তোলে।

    পরের দিন, মঙ্গলবার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা রাজনীতিবিদদের বাড়ি ও রাজনৈতিক দলের অফিসে ভাঙচুর চালায় এবং আগুন লাগায়। নেপালের সবচেয়ে বড় সংবাদমাধ্যম কান্তিপুর পাবলিকেশন্সের ভবনেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই ধরনের সহিংসতা এবং ভাঙচুর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জনদূর্ভোগের প্রতিফলন হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

    এইদিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তবে পদত্যাগ সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীদের দাবি থামেনি। ‘জেন-জি আন্দোলন’ হিসেবে পরিচিত গ্রুপটি এখন সংসদ ভেঙে দেওয়া, নতুন নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এবং ৮ সেপ্টেম্বরের গুলির নির্দেশদাতাদের বিচারের দাবি করছে।

    সেনারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাস্তায় নামেন। কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি করা হয়। শহরের বিভিন্ন অংশে পুলিশ ও সেনাদের মোতায়েন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তার অভাবে দৈনন্দিন জীবনে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।

    নেপালের ইতিহাসে বড় ছাত্র আন্দোলন নতুন নয়। দেশটি বহুবার ছাত্র বিক্ষোভ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং সহিংসতার সাক্ষী হয়েছে। ছাত্র আন্দোলন দেশীয় রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এক দশকের গৃহযুদ্ধও দেশকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, চলমান বিক্ষোভকে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি অংশ হিসেবে দেখা যায়, যা সরকারের কর্তৃত্ব ও জনগণের ক্ষোভের মধ্যে সংঘর্ষের প্রতিফলন।

    নেপালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ২০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

    বিশ্লেষণ অনুযায়ী, নেপালের এই বিক্ষোভ শুধুমাত্র একটি স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন নয়। এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, শিক্ষিত তরুণ সমাজের আশা এবং নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং সরকারী কর্তৃপক্ষের সহিংস প্রতিক্রিয়া নতুন প্রজন্মের মধ্যে আস্থা হ্রাস ও অসন্তোষ বাড়াচ্ছে।

    এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সতর্কবার্তা দিচ্ছেন। দেশের স্থিতিশীলতা, অর্থনীতি এবং সামাজিক শান্তির জন্য সরকারের কাছে দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

    নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাস ও তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন-

    নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাস দীর্ঘ ও জটিল। এটি রানা শাসন যুগ থেকে শুরু করে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ ধরে চলেছে। নেপাল কখনোই স্বাধীনতার ইতিহাসে স্বতন্ত্রভাবে একা ছিল না। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে কিছু শিক্ষিত নেপালি যুবক ও রাজনৈতিক কর্মী অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশ নেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা নেপালের তরুণদের প্রভাবিত করে। তারা বুঝতে পারে, রানাদের স্বৈরশাসনও অবসানের পথে রয়েছে। এটি ছিল নেপালের রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষের সময়।

    ১৯৫১ সালে রানাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন নেপালের প্রথম আধুনিক বিপ্লবে রূপ নেয়। রাজা ত্রিভুবন ভারতে আশ্রয় নেওয়া অবস্থার পর দেশে ফিরে এসে রাজা হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। রানাদের এক চুক্তির মাধ্যমে তারা পরোক্ষ শাসন মেনে নেন। এরপর নেপালি কংগ্রেস (এনসি) ও রানা পরিবার মিলে সরকার গঠন করে।

    কাঠমান্ডুর নাগরিক ও ডিজিটাল অধিকারকর্মী আশীর্বাদ ত্রিপাঠী বিশ্লেষণ করেন- “এ বিক্ষোভ এক রাতের ঘটনা নয়। এটি দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিত অসন্তোষের ফল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রবীণ নেতারা ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির কারণে তরুণদের ক্ষোভের মুখোমুখি হননি। তিন প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদে পালাবদল ঘটিয়েছেন, যা দেখতে মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলার মতো। তরুণরা হতাশ ও অসন্তুষ্ট ছিল।”

    ১৯৫৯ সালে নেপালে প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয়। এনসির বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালা প্রধানমন্ত্রী হন। তবে এক বছর পর রাজা মাহেন্দ্র বীরবিক্রম কৈরালা সরকার উৎখাত করেন এবং প্রায় তিন দশক ধরে রাজনৈতিক দলবিহীন পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হয়।

    পঞ্চায়েত ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের জন্য একমাত্র প্রতিবাদের পথ হয়ে ওঠে। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন ছড়ায়। শিক্ষাগত সংস্কার ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবিতে তরুণরা রাস্তায় নামেন। ছাত্র আন্দোলন ধীরে ধীরে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে চাপ দেয়। অবশেষে ১৯৯০ সালে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা পতন ঘটে এবং সংসদীয় রাজনীতি পুনরায় চালু হয়।

    এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) রাজতন্ত্র উৎখাতের জন্য সশস্ত্র লড়াই চালায়। এই দশকের সশস্ত্র সংঘর্ষে প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। রাজতন্ত্রের অবসান ও প্রজাতন্ত্রের পথে যাত্রা তখন আরো ত্বরান্বিত হয়। ২০০৬ সালে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও ছাত্র আন্দোলন রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করে। ২০০৮ সালে নেপালকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

    বর্তমান বিশ্লেষকরা বলছেন, অলি সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জেন-জি আন্দোলনকে তীব্রতর করেছে। তবে মূল কারণ ছিল বহু বছর ধরে জমে থাকা অসন্তোষ। কাঠমান্ডুর অনুসন্ধানী সাংবাদিক রজনীশ ভান্ডারি মন্তব্য করেন, “এ আন্দোলন তরুণদের ক্ষোভকে তুলে ধরেছে। শাসকরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের দাবি উপেক্ষা করেছে। কথা বলেননি, মনোযোগ দেননি বরং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ চালিয়েছেন।”

    জেন-জি আন্দোলন নেপালের তরুণ সমাজের শক্তি ও ধৈর্যকে প্রমাণ করেছে। এটি দেখিয়েছে যে, তরুণরা শুধুমাত্র স্বার্থপর বা প্রতিক্রিয়াশীল নয়; তারা দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিত অসন্তোষের মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন আনার শক্তি রাখে।

    বর্তমান নেপালের রাজনৈতিক কাঠামোতে তিনটি প্রধান দল—কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (সম্মিলিত মার্ক্সবাদী ও লেনিনবাদী) বা সিপিএন-ইউএমএল, কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী) বা সিপিএন-এমসি এবং নেপালি কংগ্রেস—মিলে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

    এর মধ্যে অলি চারবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এ প্রেক্ষাপট তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক সচেতনতা, আন্দোলনের ইতিহাস ও নেপালের সাম্প্রতিক রাজনীতিকে একত্রিত করে তুলে ধরে।

    এই আন্দোলন ও রাজনৈতিক ইতিহাস প্রমাণ করে, নেপালের তরুণ সমাজ শাসকদের দুর্নীতি ও খামখেয়ালি উপেক্ষা করতে পারছে না। তারা সক্রিয়ভাবে তাদের অধিকার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি দাবি করছে।

    নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা: প্রতিবেশী দেশ ও আঞ্চলিক শক্তির প্রভাব-

    নেপালের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা শুধু দেশটিতে সীমাবদ্ধ নয়। এটি দক্ষিণ এশিয়া এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং প্রতিবেশী শক্তিগুলোর কৌশলগত সম্পর্ক পুরো আঞ্চলিক সমীকরণকে প্রভাবিত করছে।

    নেপাল পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৮৮৫ কিলোমিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ১৯৩ কিলোমিটার বিস্তৃত। দেশটি আঞ্চলিক শক্তির মাঝামাঝি অবস্থান করছে। উত্তরে চীন, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারত। এই ভৌগোলিক অবস্থান নেপালের রাজনীতিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে জড়িত করেছে।

    কাঠমান্ডুর অনুসন্ধানী সাংবাদিক রজনীশ ভান্ডারি বলেন- “এই আন্দোলন মূলত শাসকদের দুর্নীতি, খামখেয়ালি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে তরুণদের ক্ষোভকে প্রকাশ করেছে। এটা শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জ নয় বরং সমাজের একটি বড় অংশের একত্রিত প্রতিবাদ।”

    ঐতিহাসিকভাবে নেপাল ও ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও নেপালের রাজনীতি স্থানীয় রাজনৈতিক প্রবণতার সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পম্পালী অলি বেশির ভাগ সময় চীনের দিকে ঝুঁকেছিলেন। তাঁর পদত্যাগের মাধ্যমে কাঠমান্ডুতে রাজনৈতিক ভারসাম্যের নতুন দরজা খোলা হয়েছে।

    সমাজবিজ্ঞানী লোকরঞ্জন পরাজৌলি বলেন- “পরবর্তী শাসক কে হবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সম্ভবত তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না হওয়া স্বাধীন ব্যক্তি হবেন। সেনাবাহিনীর আস্থা অর্জন করাও তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হতে পারে।”

    কিছু বিশ্লেষক সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে সম্ভাব্য অন্তর্বর্তী প্রধান হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে কাঠমান্ডুর মেয়র ও ৩৫ বছর বয়সী র‌্যাপ শিল্পী বালেন্দ্র শাহকেও (বালেন শাহ নামে পরিচিত) বিকল্প হিসেবে ধরা হচ্ছে।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মানবাধিকারকর্মী বলেন, “নতুন নেতা যেই হোক, ভারত ও চীন দেশটিতে স্থিতিশীলতা এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে এমন সরকার চাইবে।”

    ত্রিপাঠী মন্তব্য করেন, “নেপাল সবসময় দুই প্রতিবেশী দেশ—ভারত ও চীনের সঙ্গে সমতার সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ইতিহাসে এটি প্রমাণিত।”

    আঞ্চলিক প্রভাব ও কৌশল-

    যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশেষজ্ঞ আলী হাসান বলেন, “অলির পদত্যাগ চীনের জন্য ধাক্কা, আর ভারতের জন্য নতুন কৌশলগত সুযোগ হতে পারে।”

    ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপির কিছু অংশ নেপালের রাজতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। তারা মনে করে রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা উচিত। তবে ‘জেন-জি’ আন্দোলন তাদের পক্ষে নয়। এই আন্দোলন মূলত রাজতন্ত্রের প্রতি সমর্থন করে না।

    পাকিস্তানও সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখেছে। ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সংসদে আস্থা ভোটের মাধ্যমে সরানো হয়। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নেপালের বর্তমান সংকট পাকিস্তানের শাসক মহলকেও উদ্বিগ্ন করতে পারে।

    এই বছরের শুরুতে সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র কাঠমান্ডুতে ব্যাপক গণসংবর্ধনা পান। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, নেপালি সমাজের একটি অংশ এখনও সাবেক শাসকদের সমর্থন করে। আলী হাসান বলেন, “যদি রাজতন্ত্রপন্থী আন্দোলন লাভবান হয়, তবে ভারতের বিজেপিও এর সুফল পেতে পারে।” তবে তিনি যোগ করেন, ‘জেন-জি’ আন্দোলন রাজা জ্ঞানেন্দ্রের পক্ষে নয়।

    নেপালের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হলেও কৌশলগত গুরুত্বের মধ্যে সীমিত। অতীতেও নেপালের শাসকরা মাঝে মাঝে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ব্যবহার করেছেন ভারতের নজর কাঁপানোর জন্য। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৬০ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকার কৈরালা সরকারকে বরখাস্ত করলে নেপালের রাজা মাহেন্দ্র পাকিস্তান সফর করেন। পরের বছর ১৯৬৩ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সঙ্গে উষ্ণ আতিথ্য বিনিময় করেন।

    সম্প্রতি, চলতি বছরের মে মাসে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় কাশ্মীরে ২৬ জন নিহত হলে নেপাল পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধিদলকে অভ্যর্থনা জানায়। ভারতের দৃষ্টিতে অলি অতিরিক্ত চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, যা পাকিস্তানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মানবাধিকারকর্মী বলেন, “নেপালের নতুন নেতার প্রধান অগ্রাধিকার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক হবে না। পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েছে কিন্তু ভারত বা চীনের মতো নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এটির বড় প্রভাব নেই। নেপালের কোনো সরকার পাকিস্তানের ব্যাপারে বিশেষ নীতি তৈরি করে না।”

    নেপালের রাজনীতি একদিকে অভ্যন্তরীণ স্বার্থ ও সামাজিক প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। ভারত, চীন এবং পাকিস্তান—এই তিনটি শক্তি নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নেপালের ভবিষ্যত নেতৃত্বকে সঠিকভাবে নির্বাচিত করা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

    নেপালের নতুন নেতৃত্ব হয়তো স্বাধীন হবেন কিন্তু ভারত ও চীনের স্বার্থও বিবেচনায় রাখবেন। রাজতন্ত্রপন্থী সমর্থন থাকলেও, জনমতের চাপ নতুন রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

    নেপালের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য সতর্কবার্তা বহন করে। এটি দেখায়, যে কোনো ছোট দেশও বড় আঞ্চলিক শক্তির কৌশলগত পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে পারে।

    Share. Facebook Twitter LinkedIn Email Telegram WhatsApp Copy Link

    সম্পর্কিত সংবাদ

    আন্তর্জাতিক

    বাংলাদেশের সাথে উত্তেজনা চায় না ভারত: রাজনাথ সিং

    November 8, 2025
    আন্তর্জাতিক

    গাজায় শিগগিরই আন্তর্জাতিক বাহিনী পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

    November 8, 2025
    আন্তর্জাতিক

    নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল তুরস্ক

    November 8, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বাধিক পঠিত

    সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাত

    আইন আদালত October 7, 2025

    ক্রেতারা ভারত-চীন ছাড়ছে, বাংলাদেশ পাচ্ছে অর্ডার

    অর্থনীতি August 15, 2025

    সব ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী নয়

    মতামত January 13, 2025

    বরিশালের উন্নয়ন বঞ্চনা: শিল্প, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে নেই অগ্রগতি

    মতামত April 22, 2025
    সংযুক্ত থাকুন
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • YouTube
    • Telegram

    EMAIL US

    contact@citizensvoicebd.com

    FOLLOW US

    Facebook YouTube X (Twitter) LinkedIn
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement
    • About Us
    • Contact Us
    • Terms & Conditions
    • Comment Policy
    • Advertisement

    WhatsAppp

    01339-517418

    Copyright © 2025 Citizens Voice All rights reserved

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.