জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা আসলে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে, যা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রায় অসম্ভব করে তুলছে। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
৮৯ বছর বয়সী আব্বাস বৃহস্পতিবার ভিডিও লিংকের মাধ্যমে সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেন। যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা না দেওয়ায় তিনি সরাসরি নিউইয়র্কে অধিবেশনে যোগ দিতে পারেননি।
আব্বাস অভিযোগ করেন, ইসরায়েল “ক্ষুধাকে অস্ত্র” হিসেবে ব্যবহার করছে। তার ভাষায়, “প্রায় দুই বছর ধরে গাজায় আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণ গণহত্যা, ধ্বংস, ক্ষুধা ও বাস্তুচ্যুতির মুখোমুখি হয়ে চলেছে।”
আল জাজিরা জানায়, আব্বাস ভাষণ শুরু করেন গাজায় ইসরায়েলের “গণহত্যামূলক যুদ্ধের” নিন্দা জানিয়ে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজার ৪১৯ জন নিহত এবং ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৬০ জন আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজারো লাশ চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জন বন্দি করে গাজায় আনা হয়েছিল।
মাহমুদ আব্বাস বলেন, “ইসরায়েলের যা চলছে, তা শুধু আগ্রাসন নয়, এটি যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ, যা প্রমাণিত ও নথিভুক্ত হয়ে ইতিহাসে মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহ অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে।”
মঙ্গলবার জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল গত দুই বছরে গাজায় “পদ্ধতিগতভাবে বেসামরিক জীবন ধ্বংস করেছে”। ধ্বংস করা হয়েছে কূপ, পয়ঃনিষ্কাশন ও পানি শোধনাগারসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও কবরস্থান।
এর আগে জাতিসংঘের আরেক তদন্তে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে “গণহত্যা” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যুদ্ধ শুরুর প্রায় দুই বছর পর এটিকে যুগান্তকারী ঘোষণা হিসেবে দেখা হচ্ছে। শুধু বুধবারই গাজায় অন্তত ৮৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
চলমান সহিংসতার মাঝেই আব্বাস স্পষ্টভাবে হামাসেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ৭ অক্টোবরের বেসামরিক হত্যা ও অপহরণ “ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না কিংবা স্বাধীনতা ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের অংশ নয়।”
তিনি আরো বলেন, “হামাস শাসন ব্যবস্থায় কোনো ভূমিকা পাবে না”। রাষ্ট্রগঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীকে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপন প্রসঙ্গে আব্বাস অভিযোগ করেন, “চরমপন্থি ইসরায়েলি সরকার অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে দখলদারিত্ব এগিয়ে নিচ্ছে।” গত সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনের প্রকল্প এগিয়ে নেন, যা কার্যত ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পথ রুদ্ধ করবে।
তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন— “কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না।” আব্বাস এ পরিকল্পনাকে “আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার প্রকাশ্য লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের জনগণ পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজায় দশকের পর দশক ধরে দখল, হত্যা, গ্রেপ্তার, বসতি স্থাপন এবং জমি-সম্পদ লুটপাটের শিকার।”
ভাষণের শেষে আব্বাস যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি, বন্দি বিনিময় এবং গাজার জনগণকে তাদের ভূমিতে টিকে থাকার নিশ্চয়তা দাবি করেন। তিনি বলেন, “যত রক্তই ঝরুক, যত কষ্টই হোক, আমাদের বেঁচে থাকার ইচ্ছা কখনো শেষ হবে না।”