ত্রাণবাহী নৌকাগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী ও মানবাধিকারকর্মীরা ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’ অভিযান চালাচ্ছেন, যা এখন গাজার কাছে ‘চরম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়’ পৌঁছেছে। অর্থাৎ, তারা গাজার উপকূল থেকে প্রায় ১২০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে। এর আগে এই এলাকায় যেকোনো ফ্লোটিলা অভিযান ইসরায়েলি হামলার সম্মুখীন হয়েছিল।
আজ বুধবার আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ছোট ছোট নৌকাগুলোতে সারাবিশ্ব থেকে আগত মানবাধিকারকর্মীরা আছেন। তারা খাদ্য, ওষুধ, কাপড় ও অন্যান্য নিত্যপণ্য নিয়ে গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, যাতে ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে এসব সামগ্রী দুর্গত মানুষের হাতে পৌঁছানো যায়।
সংবাদে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সিসকা আলবানিজ, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মন্ত্রী ম্যাট থিসলথওয়াইট, তুরস্কের তরুণ আইনপ্রণেতা জেহরানুর আয়দেমি সহ অন্যান্য শীর্ষ রাজনৈতিক ও মানবাধিকারকর্মীরা ফ্লোটিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
স্পেন ও ইতালি থেকে আগত স্বেচ্ছাসেবীরা ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় প্রবেশ করেছেন। তুরস্কের ড্রোনগুলো ফ্লোটিলার সব সময় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। নিরাপত্তার জন্য কিছু নৌকায় লাইভ সম্প্রচারও চলছে।
ইসরায়েল ফ্লোটিলার এগোনো রোধ করতে বদ্ধপরিকর। ইসরায়েলি নৌবাহিনী বলছে, গাজার অবরোধ ‘আইনসিদ্ধ’, আর এই স্বেচ্ছাসেবীরা অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছেন। তবে আন্তর্জাতিক আইনে দুর্গতদের কাছে মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা আছে।
ডেভিড অ্যাডলার, যিনি ফ্লোটিলার অন্যতম আয়োজক, সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘এটি আমার শেষ চিঠি হতে পারে। গাজার উপকূল থেকে প্রায় ১২০ নটিক্যাল মাইল দূরে আছি। গত রাতে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর কয়েকটি জাহাজ আমাদের হুমকি দিয়েছে, জাহাজে আক্রমণ করেছে, ক্রুদের ভয় দেখিয়েছে এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে।’’
ফ্লোটিলার অংশগ্রহণকারীরা মোবাইল ফোন ও সিসিটিভির মাধ্যমে পরিস্থিতি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছেন, যাতে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্ভাব্য অপরাধ প্রকাশ পায়।
অস্ট্রেলিয়ার সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ম্যাট থিসলথওয়াইট বলেন, তিনি আশা করছেন সব পক্ষ আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবেন এবং সংঘাত বা অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকবেন। ছয় অস্ট্রেলিয়ান অংশগ্রহণকারী এই ফ্লোটিলায় গাজার অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছেন।
ফ্লোটিলার দিকে এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ইসরায়েলি নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা এবং ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ ১৫ মিনিটের জন্য বিঘ্নিত করার অভিযোগও উঠেছে।
তুরস্কের আইনপ্রণেতা জেহরানুর আয়দেমি বলেন, ‘‘আমাদের চোখ, কান এবং হৃদয় সবসময় সুমুদ ফ্লোটিলার সঙ্গে আছে।’’