মিয়ানমারের সামরিক জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং বর্তমানে ঘন ঘন বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতা দখলের পর থেকে বিশেষ করে গত ছয় মাসে তার আন্তর্জাতিক সফরের সংখ্যা অতীতের তুলনায় অনেক বেশি। এই সফরগুলোকে পর্যবেক্ষকরা আংশিকভাবে আগামী ডিসেম্বরের বিতর্কিত নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
জেনারেল এই সফরে চীন ও রাশিয়ায় দু’বার করে, থাইল্যান্ড, বেলারুশ এবং সম্প্রতি কাজাখস্তান সফর করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেছেন।
ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা রিচার্ড হর্সি বলেন, ‘মিন অং হ্লাইংয়ের এ বছরের ঘন ঘন বিদেশ সফর তার বর্ধিত আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন, যা অভ্যন্তরীণ হুমকি কমার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়।’
জান্তা মুখপাত্র জাও মিন তুন রাষ্ট্রীয় মিডিয়াকে জানান, ‘চীন, রাশিয়া ও কাজাখস্তান নির্বাচনের দিকে তাদের ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।’ যদিও পশ্চিমা দেশগুলো ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমার সরকারকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং আয়াসিয়ান সম্মেলন থেকেও জান্তাকে বাদ দিয়েছে।
মিয়ানমার জান্তা ডিসেম্বরের ২৮ তারিখ থেকে ধাপে ধাপে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। তবে চলমান সংঘাতের কারণে ভোট হবে দেশের অর্ধেকেরও কম এলাকায় এবং শুধুমাত্র সামরিকপন্থী দলগুলো অংশগ্রহণ করতে পারবে। বিশ্লেষকরা বলেন, এটি মূলত ক্ষমতায় থাকার নাটকীয় প্রয়াস ছাড়া কিছু নয়।
চীনের সঙ্গে বৈঠকের পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘মিয়ানমারে সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে চীন সমর্থন করে।’
বিশ্লেষক ইয়ি মিও হেইন মন্তব্য করেন, ‘চীনের সমর্থন জান্তা সরকারকে কূটনৈতিক বৈধতা ও উপকরণগত সহায়তা দেবে, যা নির্বাচনী নাটককে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।’
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় মিয়ানমারে তেল-গ্যাস পাইপলাইন ও গভীর সমুদ্রবন্দরসহ নানা অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ হচ্ছে, যা মিন অং হ্লাইংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।
অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বৈধতা অর্জনের এই দ্বৈত প্রচেষ্টা জান্তার ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে, যদিও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে না বলে পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন।
গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ৬৯ বছর বয়সী জেনারেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির চেষ্টা করেছেন, যা তার ভ্রমণের বিকল্প সীমিত করেছিল।