গাজার উদ্দেশে মানবিক সহায়তাবাহী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটকানোর ঘটনায় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের ঢেউ ওঠেছে। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ গতকাল রাস্তায় নেমে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর অবরোধের প্রতিবাদ করেছেন এবং দেশটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞার দাবি তুলেছেন। বিক্ষোভকারীরা এ ঘটনার উল্লেখযোগ্য অংশকে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এদিকে ফ্লোটিলার সব নৌযান আটকে দেয়ার পর গাজার উদ্দেশ্যে নতুন করে ১১টি নৌযান যাত্রা করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) জানায়, এ নৌযানে প্রায় ১০০ জন অধিকারকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন।
ফ্লোটিলার অভিযানে ছিলেন জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা, বার্সেলোনার সাবেক মেয়র আডা কোলাও, ইউরোপীয় সংসদ ও বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যরা। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগকে ‘প্ররোচনামূলক’ আখ্যা দিয়েছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটিকে মানবিক সহায়তা রোধের স্পষ্ট চেষ্টাস্বরূপ দেখছে।
ইউরোপের প্রধান শহরগুলোয় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বার্সেলোনায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ ‘গাজা, তুমি একা নও’, ‘ইসরায়েল বর্জন করো’ এবং ‘ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চাই’ স্লোগান দিয়ে মিছিল করেছে। মাদ্রিদ, ভ্যালেন্সিয়া, প্যারিস, মার্সেই, ডাবলিন, রোম, মিলান, নেপলস, তুরিন, বোলোনিয়া, পালেরমো, লিসবন, পোর্তো, জেনেভা, ব্রাসেলস, বার্লিন, হেগ, এথেন্স, নিকোসিয়া, ইস্তানবুল, তিউনিস, ব্রাজিলিয়া, বুয়েনস এইরেস, মেক্সিকো সিটি, সান্তিয়াগো, কুয়ালালামপুর, করাচি, জাকার্তা, সিডনি ও মেলবোর্নেও মানুষ রাস্তায় নামে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, বহরকে সতর্ক করা হয়েছিল যে তারা সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং বিকল্প পথে সহায়তা পাঠানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। তবে আয়োজকরা বলেছেন, তাদের মিশন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং দীর্ঘদিনের অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন জানিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর ‘কনসায়েন্স’ নামের জাহাজ আটটি নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। এছাড়া ইতালি ও ফ্রান্সের পতাকাবাহী নৌবহর ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’ দুইটি নৌকা নিয়ে গাজার উদ্দেশ্যে যাচ্ছে। বর্তমানে এসব জাহাজের প্রায় ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবী ও ক্রু ক্রিট দ্বীপের উপকূলে অবস্থান করছেন।
সংগঠনটি ২০০৮ সালে ফ্রিডম ফ্লোটিলা ফাউন্ডেশন, গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা ও সুমুদ নুসানতারা মিলে গঠন করে। গত ১৭ বছরে তারা বহুবার গাজায় ত্রাণ পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এই বহরে থাকা ‘কনসায়েন্স’ নামের জাহাজে রয়েছেন।