গাজায় শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ফিলিস্তিনিরা ধীরে ধীরে তাদের বাড়িঘরে ফিরে আসা শুরু করেছেন। দুই বছর আগে শুরু হওয়া সংঘাতে প্রাণ বাঁচাতে বহু ফিলিস্তিনি একাধিকবার বাড়ি ছেড়ে গাজার বিভিন্ন প্রান্তে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
গাজা উপত্যকায় নিজেদের বাড়ির পথে যাত্রা করা কয়েকজন ফিলিস্তিনির সঙ্গে এ সব বিষয়ে কথা বলেছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ফিলিস্তিনিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ আল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, কেউ আবার যুদ্ধ সত্যিই থেমেছে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া:
- গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের বাসিন্দা আমির আবু ইয়াদে বলেন, “আমরা ক্ষতবিক্ষত ও বেদনাক্রান্ত হলেও এই অবস্থার জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
- মুহাম্মদ মুর্তজা গাজা নগরীর বাসিন্দা বলেন, “আমি সবসময় প্রার্থনা করেছি যেন আমার বাড়ি ঠিক থাকে। এখন শুধু চাই যুদ্ধ চিরতরে শেষ হোক।”
- ৫৩ বছর বয়সী আরিজ আবু সাদায়েহ বলেন, “যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি ফেরায় খুশি। যদিও আমি যুদ্ধে এক ছেলে ও এক মেয়েকে হারিয়েছি, তবু এই যুদ্ধবিরতি আমাদের বাড়িতে ফিরতে সাহায্য করেছে।”
যুদ্ধবিরতির পেছনের ঘটনা:
মিসরের শারম আল শেখে গত বুধবার হামাস ও ইসরায়েল এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর শুক্রবার ভোরে চুক্তিটি ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলি সেনারা গাজার নির্দিষ্ট এলাকা থেকে সরবে। এছাড়া ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাস জীবিত সব জিম্মিকে ইসরায়েলের কাছে ফিরিয়ে দেবে, এরপর প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করা ২০ দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’-এর এই যুদ্ধবিরতি প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পরিকল্পনা নিয়ে গত সোমবার থেকে মিসরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা চলছিল। ফিলিস্তিনি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএলএফপি) আলোচনায় অংশ নিয়েছিল।
বিবিসির প্রতিবেদনে দেখা যায়, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি সেনারা গাজার কিছু এলাকা থেকে আংশিকভাবে প্রত্যাহার শুরু করেছে। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজার উত্তর দিকে যাচ্ছেন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো বাধাহীনভাবে প্রবেশ করবে। প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় পাঠানোর কথা থাকলেও বাস্তবে এটি কতটা কার্যকর হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়।