পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত আবারও রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া তীব্র সংঘাতে পাকিস্তানের কুররম সীমান্তে অন্তত ১২ জন আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও শতাধিক।
বুধবার সকালে আফগান তালেবান সরকারের মুখপাত্র এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, সংঘাতের সূত্রপাত হয় যখন আফগান সেনা ও পাকিস্তানের নিষিদ্ধ সংগঠন তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) যৌথভাবে পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
জিও নিউজের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের সেনারা পাল্টা জবাবে তীব্র গোলাবর্ষণ শুরু করে। এতে আফগান সেনাদের অন্তত চারটি সীমান্ত পোস্ট ও ছয়টি ট্যাংক ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান।
সেনা সূত্র জানায়, সংঘাত শুরুর মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই আফগানিস্তানের খোস্ট প্রদেশের শামশাদ সেনা পোস্ট পুরোপুরি ধ্বংস করে পাকিস্তান। পরে একই প্রদেশের নার্গসার, তুর্কমানজাই ও পোলসেন পোস্টও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। নার্গসার পোস্টে থাকা চারটি ট্যাংক এবং পোলসেনের কাছে টিটিপির একটি প্রশিক্ষণ শিবিরও ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছে পাক সেনারা।
পাকিস্তানের এক সামরিক কর্মকর্তা জিও নিউজকে জানান, “আমাদের হামলার মুখে অনেক আফগান সেনা পোস্ট ছেড়ে পালিয়েছে। একটি পোস্টে তারা আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত হিসেবে সাদা পতাকাও তোলে।”
তবে আফগান পক্ষ বলছে, এই হামলায় তাদের বেসামরিক নাগরিকরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
এর আগে, চলতি মাসের ১১ অক্টোবরও দুই দেশের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছিল। সেই ঘটনায় ২০০-এর বেশি আফগান সেনা ও ২৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হন বলে দাবি করে ইসলামাবাদ।
সংঘাতের পেছনে মূল কারণ হিসেবে পাকিস্তান বলছে—আফগানিস্তানে টিটিপি নেতাদের আশ্রয় ও সহায়তা দিচ্ছে তালেবান সরকার। ৯ অক্টোবর পাকিস্তান কাবুলে বিমান হামলা চালায়, যাতে টিটিপির শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেসুদ নিহত হয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এর প্রতিশোধ হিসেবেই ১১ অক্টোবর আফগান সেনারা পাকিস্তানের সীমান্ত পোস্টে হামলা চালায় বলে দাবি ইসলামাবাদের। আর তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারের এই নতুন রক্তক্ষয়ী সংঘাত।
দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সীমান্ত উত্তেজনা চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাবুল ও ইসলামাবাদের সম্পর্ক এখন সবচেয়ে নাজুক অবস্থায়, এবং এই সংঘাত যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে।