বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে ১০টি প্রকল্প ও চুক্তি বাতিলের বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়নি বলে জানিয়েছে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন।
রোববার (১৯ অক্টোবর) রাতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে দাবি করেন, ভারতের সঙ্গে করা ১০টি চুক্তি ও প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বাকি চুক্তিগুলোও পুনর্বিবেচনার পর্যায়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের মিডিয়া অফিসার বলেন,
“বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো যোগাযোগ আমাদের সঙ্গে করা হয়নি।”
অর্থাৎ, ভারতের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বার্তা বা নোটিফিকেশন পাওয়া যায়নি।
আসিফ মাহমুদের পোস্ট করা ফটোকার্ডে চুক্তিগুলোর নাম, সইয়ের সাল এবং বাতিল, স্থগিত বা পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
- ত্রিপুরা-চট্টগ্রাম রেল সংযোগ প্রকল্প
- অভয়পুর-আখাউড়া রেলপথ সম্প্রসারণ
- আশুগঞ্জ-আগরতলা করিডর
- ফেনী নদী পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প
- বন্দরের ব্যবহার সংক্রান্ত সড়ক ও নৌপথ উন্নয়ন চুক্তি
- ফারাক্কা বাঁধ সংক্রান্ত প্রকল্পে বাংলাদেশের আর্থিক সহযোগিতা প্রস্তাব
- সিলেট-শিলচর সংযোগ প্রকল্প
- পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন সম্প্রসারণ চুক্তি
- ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল (মিরসরাই ও মোংলা আইইজেড)
- ভারতীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানি জিআরএসইর সঙ্গে টাগ বোট চুক্তি
এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন প্রকল্পকে স্থগিত তালিকায় রাখা হয়েছে।
আসিফ মাহমুদের তথ্যমতে, আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি পুনর্বিবেচনার আওতায় রয়েছে।
এছাড়া গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন বা পুনর্বিবেচনার পর্যায়ে আছে।
তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি এখনো খসড়া অবস্থায় থাকলেও বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা চলমান বলে জানিয়েছেন তিনি।
চুক্তি বাতিলের প্রেক্ষাপট নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন মন্তব্য করতে রাজি হননি। সোমবার (২০ অক্টোবর) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
“আজ এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলবো না।”
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুই দেশের মধ্যে কতটি চুক্তি হয়েছে বা কী ধরনের শর্তে তা স্বাক্ষরিত হয়েছে— সে বিষয়ে প্রকাশ্য তথ্য খুবই সীমিত।
সরকার পরিবর্তনের পরও সরকারি ওয়েবসাইট বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এসব চুক্তির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ভারতীয় হাইকমিশনের তথ্যমতে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কমপক্ষে ২০টি চুক্তি এবং ৬৬টি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হয়েছে।
এর পাশাপাশি বিভিন্ন সহযোগিতা প্রকল্পের পরিধিও বৃদ্ধি পায়, যদিও বেশিরভাগ চুক্তির বিস্তারিত শর্তাবলী এখনো প্রকাশ্য নয়।

