প্রবল শক্তি নিয়ে ক্যারিবীয় অঞ্চলে তাণ্ডব চালাচ্ছে হারিকেন মেলিসা। প্রথমে জ্যামাইকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে এখন এটি কিউবার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে লাখো মানুষকে ইতিমধ্যে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ঝড়টির গতি কিছুটা কমে ক্যাটাগরি ৪ পর্যায়ে এলেও এর শক্তি এখনো বিধ্বংসী। মার্কিন ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে জ্যামাইকার নিউ হোপ এলাকায় স্থলভাগে আঘাত হানার সময় বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ২৯৫ কিলোমিটার, যা ক্যাটাগরি ৫ মাত্রার সমান।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) একে “শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়” হিসেবে বর্ণনা করেছে। প্রবল বৃষ্টি ও বন্যায় জ্যামাইকা, হাইতি ও ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে—জ্যামাইকা ও হাইতিতে তিনজন করে এবং ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রে একজন নিহত, একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এনএইচসি সতর্ক করেছে, উত্তর-পশ্চিম জ্যামাইকায় এখনো প্রবল ঝড় বইছে, যা প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, মেলিসা আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে পারে। ডব্লিউএমওর সাইক্লোন বিশেষজ্ঞ আন-ক্লেয়ার ফন্টান জানিয়েছেন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭০০ মিলিমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা মৌসুমি গড়ের প্রায় দ্বিগুণ।
জ্যামাইকার স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ডেসমন্ড ম্যাকেঞ্জি বলেছেন, “আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি, কিন্তু ক্যাটাগরি ৫ মাত্রার ঝড়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকা প্রায় অসম্ভব।” তিনি গত বছরের হারিকেন বেরিলের ধ্বংসযজ্ঞের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।
রেডক্রস জানিয়েছে, দেশের পশ্চিমাঞ্চলে প্রবল বাতাস ও ভারী বৃষ্টিতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সংস্থার আন্তর্জাতিক ফেডারেশন সতর্ক করেছে, প্রায় ১৫ লাখ মানুষ মেলিসার প্রভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।
রাজধানী কিংস্টনের সাংবাদিক রোবিয়ান উইলিয়ামস জানিয়েছেন, “প্রবল বাতাসে গাছ উপড়ে পড়েছে, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে, অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। উদ্ধারকর্মীরা রাস্তায় কাজ করছেন।”
জ্যামাইকার হোটেলগুলো পর্যটকদের আশ্রয় দিতে কম ভাড়ায় কক্ষ উন্মুক্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস জানিয়েছেন, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, মেলিসা বর্তমানে ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার বেগে কিউবার দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। এটি চলতি বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঝড় বলে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবারের মধ্যেই মেলিসা ক্যাটাগরি ৪ মাত্রার শক্তিতে কিউবায় আঘাত হানতে পারে। ইতোমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে অন্তত ৬ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সান্তিয়াগো ও পূর্বাঞ্চলীয় হোলগুইন প্রদেশে ২ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন।
কিউবার উপপ্রধানমন্ত্রী এদুয়ার্দো মার্টিনেজ বলেন, “এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি। আমরা এমন কিছু আগে কখনও দেখিনি।”

