চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) মধ্যে। এই চুক্তির অংশ হিসেবে টিএনএলএ মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের দুটি শহর থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
টিএনএলএ মঙ্গলবার জানায়, চীনের কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত কয়েক দিনের আলোচনায় চুক্তিটি হয়। সীমান্ত থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরের এই শহরেই চীনের মধ্যস্থতায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
চুক্তির আওতায় টিএনএলএ মান্দালয়ের মোগক শহর ও শান রাজ্যের উত্তরাঞ্চলীয় মোমেইক শহর থেকে তাদের সদস্যদের প্রত্যাহার করবে। তবে তারা সরে যাওয়ার নির্দিষ্ট সময় প্রকাশ করেনি। মোগক শহরটি রুবি খনির জন্য বিখ্যাত।
চুক্তি অনুযায়ী, আগামী বুধবার থেকে উভয় পক্ষ অগ্রসর হওয়ার পদক্ষেপ বন্ধ রাখবে। টিএনএলএ দাবি করেছে, জান্তা বাহিনী বিমান হামলা বন্ধ রাখার বিষয়ে সম্মত হয়েছে, যদিও এ বিষয়ে জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি।
টিএনএলএ মিয়ানমারের “থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স”-এর অংশ, যার অন্য দুই সদস্য হলো মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি ও আরাকান আর্মি। এই তিনটি গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে আসছে এবং ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর গঠিত গণতান্ত্রিক প্রতিরোধ আন্দোলনেরও অংশ।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এই জোট উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিম মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখলে নেয়। টিএনএলএ একাই ১২টি শহর নিয়ন্ত্রণে নেয়। তবে চলতি বছরের শুরুতে চীনের মধ্যস্থতায় হওয়া আলোচনার ফলে তাদের অগ্রগতি ধীর হয় এবং সেনাবাহিনী কিছু বড় শহর পুনর্দখল করতে সক্ষম হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন এখন মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে একটি কেন্দ্রীয় মধ্যস্থতাকারী শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখছে, কারণ দেশটিতে চীনের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ গভীরভাবে জড়িত। চলতি বছর চীন আরও প্রকাশ্যভাবে জান্তা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে।
আগামী ডিসেম্বরে মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নির্বাচনকে ঘিরে সামরিক সরকার নিজেদের ক্ষমতা সুসংহত করার চেষ্টা করছে। তবে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন বহু এলাকায় ভোট গ্রহণ সম্ভব নাও হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা এই নির্বাচনের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন এবং একে সামরিক সরকারের অবস্থান বৈধ করার একটি রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করছেন।

