প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সগামী দুই অস্ট্রেলীয় সৈন্যের লেখা দুটি চিঠি এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর গন্তব্যে পৌঁছেছে। সৈন্যরা যুদ্ধের পথে আবেগঘন চিঠিগুলো বোতলে ভরে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন, যা সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে ভেসে আসে।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, ১৯১৬ সালে যুদ্ধযাত্রার কয়েক দিনের মধ্যেই চিঠিগুলো লেখা হয়। তাতে তরুণ সৈন্যদের উচ্ছ্বাস ও আশাবাদী মনোভাব ফুটে উঠেছিল। চিঠির লেখকদের একজন ছিলেন ২৮ বছর বয়সী প্রাইভেট ম্যালকম নেভিল, যিনি তাঁর মাকে লিখেছিলেন—‘জাহাজের খাবার দারুণ এবং আমরা খুবই খুশি।’ কিন্তু কয়েক মাস পরেই তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারান। অপর সৈন্য ৩৭ বছর বয়সী প্রাইভেট উইলিয়াম হার্লি যুদ্ধ শেষে জীবিত ফিরে এলেও ১৯৩৪ সালে ক্যান্সারে মারা যান।
চিঠিগুলো উদ্ধার করেন স্থানীয় নারী ডেব ব্রাউন ও তাঁর পরিবার। তারা পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার এসপেরেন্স অঞ্চলের প্রত্যন্ত হোয়ার্টন সৈকতে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন। এ মাসের শুরুর দিকে ময়লা তুলতে গিয়ে তারা একটি পুরনো কাচের বোতল খুঁজে পান। ব্রাউন বলেন, “আমরা সৈকত পরিষ্কার করার সময় কখনও কিছু ফেলে যাই না। বোতলটি চোখে পড়তেই বুঝতে পারি এটি বিশেষ কিছু।”
বোতলটি ছিল শোয়েপস ব্র্যান্ডের, মোটা স্বচ্ছ কাচের তৈরি। ভেতরে ছিল দুটি চিঠি, তারিখ ১৫ আগস্ট ১৯১৬। যদিও কাগজ কিছুটা ভেজা ছিল, লেখা এখনো পাঠযোগ্য ছিল। পরবর্তীতে ব্রাউন ওই দুই সৈন্যের পরিবারের সন্ধান বের করেন এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন।
রেকর্ড অনুযায়ী, ম্যালকম নেভিল ও উইলিয়াম হার্লি যে জাহাজে উঠেছিলেন, এইচএমএটি এ৭০ ব্যালারেট, তা ১৯১৬ সালের ১২ আগস্ট অ্যাডিলেড থেকে রওনা হয় ফ্রান্সের ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে ৪৮তম অস্ট্রেলিয়ান ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের সহায়তায় যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে।
নেভিল চিঠিতে অনুরোধ করেছিলেন, বোতলটি যিনি পাবেন, তিনি যেন তাঁর মা রবার্টিনা নেভিলকে চিঠিটি পৌঁছে দেন। অন্যদিকে হার্লি লিখেছিলেন, তাঁর মা তখন আর বেঁচে নেই, তাই “যে খুঁজে পাবে, সে যেন চিঠিটি নিজের কাছে রাখে।” তিনি আরও লিখেছিলেন, “আশা করি আপনি আমাদের মতো ভালো আছেন।”
নেভিলের চিঠিতে ছিল উচ্ছ্বাসের ছোঁয়া—“আমরা দারুণ সময় কাটাচ্ছি, খাবার ভালো, জাহাজ কিছুটা দুলছে, তবে আমরা ‘হ্যাপি অ্যাজ ল্যারি’।” তিনি লেখেন, “আমরা এখন সমুদ্রের কোথাও আছি।” হার্লি তার অবস্থান বর্ণনা করে বলেন, “আমরা দ্য বাইটের কোথাও আছি।” এটি দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিশাল উপসাগর গ্রেট অস্ট্রেলিয়ান বাইট–কে নির্দেশ করে।
চিঠিগুলো পাওয়া ডেব ব্রাউন ধারণা করেন, বোতলটি হয়তো খুব দূর পর্যন্ত যায়নি; বরং শত বছর ধরে বালির নিচে চাপা ছিল এবং সাম্প্রতিক ঢেউয়ে উপরে উঠে এসেছে।
চিঠি হাতে পেয়ে সৈন্যদের উত্তরসূরিরা গভীর আবেগে ভেসেছেন। হার্লির নাতনি অ্যান টার্নার বলেন, “আমরা হতবাক। মনে হচ্ছে, দাদু যেন সমাধি থেকে আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন।” নেভিলের ভাগ্নে হার্বি নেভিল বলেন, “এটি আমাদের পরিবারকে আবার একত্র করেছে। তিনি যুদ্ধ নিয়ে খুশি ছিলেন, কিন্তু তাঁর মৃত্যু ছিল বেদনাদায়ক। সত্যিই তিনি ছিলেন অসাধারণ একজন মানুষ।”

