ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযানের নামে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ তার সরকারের ৩৭ জন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে তুরস্ক।
গতকাল শুক্রবার ইস্তাম্বুলের শীর্ষ সরকারি কৌঁসুলির দপ্তর থেকে এই পরোয়ানা জারি করা হয় বলে জানিয়েছে মার্কিন বার্তাসংস্থা সিএনএন। তুরস্কের এই সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে ইসরায়েলি অভিযানের বৈধতা ও মানবাধিকার প্রশ্নে।
নেতানিয়াহুর পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গিভর এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়া’আল জামির।
তুর্কি কৌঁসুলিদের জারি করা পরোয়ানায় গাজায় গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গত সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক ত্রাণ বিতরণকারী জোট ‘ফ্লোটিলা’–এর ত্রাণবহর আটকানোর ঘটনাকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরোয়ানা জারির পরপরই ইসরায়েল এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সা’র এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ। তিনি তুরস্কের বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করছেন বিরোধীদের দমন, সাংবাদিক ও মেয়রদের বন্দি করা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে।”
অন্যদিকে, তুরস্কের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন হামাস। শুক্রবার এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটির হাইকমান্ড জানায়, “গাজা ইস্যুতে তুরস্কের জনগণ ও তাদের নেতৃত্বের নৈতিক অবস্থান এই সিদ্ধান্তে আরো একবার প্রমাণিত হলো।”
উল্লেখ্য, গাজায় গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)–এ দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলায় তুরস্কও বাদিপক্ষ হিসেবে যুক্ত হয়েছে। এমন এক সময়ে এই পরোয়ানা জারি করা হলো, যখন গাজায় একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে।
তুরস্কের এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের সঙ্গে এর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও অবনতি ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এর আগে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের সমালোচনায় এরদোয়ান সরকার বহুবার আন্তর্জাতিক ফোরামে তীব্র বক্তব্য দিয়েছে, তবে এবারই প্রথম তারা বিচারিক পর্যায়ে এত বড় পদক্ষেপ নিল।

