যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ তীব্র হওয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অক্টোবর মাসে দেশের রপ্তানি কমেছে, যা বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন রপ্তানি চীনের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হলেও মার্কিন শুল্ক এবং আন্তর্জাতিক চাহিদার দুর্বলতার কারণে এই খাতে গভীর সংকট তৈরি হয়েছে। রপ্তানি কমার কারণে কেবল বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবই দেখা যায়নি, বরং চীনা পণ্যের ওপর আমেরিকান ক্রেতাদের নির্ভরতা কমার প্রবণতাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের জন্য এখন অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বৈচিত্র্য আনা সময়োপযোগী ও কঠিন পরীক্ষা।
জানা গেছে, গত আট মাসে প্রথমবার অক্টোবরের মাসে চীনের রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। এই পতনের এক সপ্তাহ আগে শি জিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক হওয়ার কারণে বাণিজ্য উত্তেজনা তীব্র হয়। অক্টোবর মাসে চীনের রপ্তানি ১.১ শতাংশ কমেছে। এর আগে ব্লুমবার্গ পূর্বাভাস দিয়েছিল, রপ্তানি ২.৯ শতাংশ বাড়বে। একই সময়ে আমদানি বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ। সেপ্টেম্বরের পরিসংখ্যান এবং ব্লুমবার্গের ২.৭ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাসের তুলনায় এটি কম। চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস এই তথ্য প্রকাশ করেছে। অক্টোবরের শেষে দক্ষিণ কোরিয়ায় শি ও ট্রাম্পের বৈঠকের পর দুই দেশের বাণিজ্যযুদ্ধে কিছুটা বিরতি এসেছে।
এর আগে বেইজিং নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল দুর্লভ ধাতু প্রযুক্তি রপ্তানিতে। চীনের এই খাতে বিশ্বব্যাপী আধিপত্য আছে। এই ধাতুগুলো প্রতিরক্ষা ও গাড়ি প্রস্তুতকারকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার বৈঠকের পর সেই হুমকি প্রত্যাহার করা হয়। ট্রাম্প বৈঠককে ‘বিরাট সাফল্য’ হিসেবে অভিহিত করেন। ওয়াশিংটন চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক অর্ধেক কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে। জবাবে বেইজিং দুর্লভ ধাতু রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। এতে ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদেরও স্বস্তি মিলেছে। চীন আমেরিকান কৃষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সয়াবিনসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের ওপর থেকে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের আমদানি মাসিক হিসেবে ১১.৬ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে চীনের রপ্তানি ১.৮ শতাংশ বেড়েছে।
পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের অর্থনীতিবিদ ঝিওয়েই ঝাং জানিয়েছেন, চীনা রপ্তানিকারকরা উচ্চ শুল্ক এড়াতে আগেভাগেই তাদের বাণিজ্য শেষ করার চেষ্টা করছিলেন। তিনি বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধ এক বছরের জন্য স্থগিত হওয়ায় রপ্তানি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলছেন, রপ্তানির ধীরগতি আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় চীনের অভ্যন্তরীণ চাহিদার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

