দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রপথ আবারও কালো অধ্যায় লিখল মানবতার ইতিহাসে। মালয়েশিয়ার উপকূলের কাছে অভিবাসীবাহী একটি নৌকা ডুবে শত শত মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন, রোববার (৯ নভেম্বর) এমনই এক মর্মান্তিক খবর জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
উদ্ধার অভিযান চলমান থাকলেও এখন পর্যন্ত ১০ জনকে জীবিত এবং একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা গেছে। জীবিতদের মধ্যে রয়েছেন তিনজন মিয়ানমারের নাগরিক, দুইজন রোহিঙ্গা এবং একজন বাংলাদেশি পুরুষ।
মালয়েশিয়ার সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিভাগ জানিয়েছে, ডুবে যাওয়া নৌকাটি মিয়ানমারের বুথিডং এলাকা থেকে প্রায় ৩০০ যাত্রী নিয়ে যাত্রা করেছিল, গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ ল্যাংকাউই। ধারণা করা হচ্ছে, ল্যাংকাউইয়ের উত্তরে তারুতাও দ্বীপের কাছাকাছি এলাকায় নৌকাটি ডুবে যায়।
স্থানীয় পুলিশ প্রধান আদজলি আবু শাহ জানান, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী অন্তত ৯০ জন যাত্রীবাহী একটি নৌকা ডুবে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, পাচারকারীরা সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছালে বড় নৌকা থেকে যাত্রীদের তিনটি ছোট নৌকায় ভাগ করে দেয়, যাতে কর্তৃপক্ষের নজর এড়ানো যায়। প্রতিটি ছোট নৌকায় ছিল প্রায় ১০০ জন করে যাত্রী।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। বছরের পর বছর ধরে মিয়ানমারের বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে নির্যাতনের মুখে তারা পাড়ি দিচ্ছেন অনিশ্চিত সমুদ্রপথে—জীবনের ঝুঁকি নিয়েও। অনেকেই পৌঁছানোর আগেই হারিয়ে যাচ্ছেন নীল জলে।
২০১৭ সালের পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক সহিংসতা শুরু হয়। এরপর ২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। সেই অরাজকতার সুযোগে মানবপাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে, যারা শরণার্থীদের মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে বিপজ্জনক সমুদ্রপথে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, শুধু গত বছরই আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগরে প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। তবু আশার আলো খুঁজতে সমুদ্রপথে পালিয়ে যাওয়ার এই যাত্রা থেমে নেই।
সমুদ্রের ঢেউ থেমে যেতে পারে, কিন্তু আশ্রয়ের খোঁজে এই মানুষের যাত্রা থামছে না — তাদের কাহিনি যেন মানবতার ব্যর্থতার এক নীরব সাক্ষী।

