দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে আবারও রক্তাক্ত কারাগার। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মাচালার একটি জেলে ভয়াবহ দাঙ্গায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩১ বন্দি। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, নিহতদের বেশিরভাগই শ্বাসরোধে ও ফাঁসিতে ঝুলে মারা গেছেন।
রোববার স্থানীয় সময় সকালে শুরু হওয়া এই দাঙ্গা রাত পর্যন্ত চলে। সোমবার এ খবর নিশ্চিত করেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স, যা জানিয়েছে—এই সহিংসতার ঘটনাস্থল ছিল মাচালার একটি উচ্চনিরাপত্তা কারাগার, যা আগেও বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
কারা সংস্থা এসএনএআই জানিয়েছে, নতুন একটি নিরাপত্তা ইউনিটে বন্দিদের স্থানান্তর ও পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াকে ঘিরেই দাঙ্গার সূত্রপাত। সকালে এক দফা সংঘর্ষে চার বন্দি নিহত হওয়ার পর পুলিশ বিশেষ বাহিনী দ্রুত নিয়ন্ত্রণ নেয়, কিন্তু বিকেলের দিকেই পরিস্থিতি আবারও ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
“নিহত ২৭ বন্দি শ্বাসরোধে ও ফাঁসিতে ঝুলে মারা গেছেন,”—বিবৃতিতে জানানো হয়। তবে কীভাবে ঘটনাটি ঘটেছে, বা দাঙ্গার নেতৃত্ব কারা দিয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সরকারের ভাষ্যমতে, এসব সহিংসতার পেছনে মূল কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী অপরাধচক্রগুলোর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও এলাকা দখলের যুদ্ধ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির জেলখানাগুলো যেন পরিণত হয়েছে গ্যাংগুলোর যুদ্ধক্ষেত্রে। শুধু ২০২3 সালেই একাধিক কারাগারে সংঘর্ষে শত শত বন্দি প্রাণ হারিয়েছেন।
এর আগেও একই কারাগারে রক্তপাত ঘটেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই গ্যাংয়ের সংঘর্ষে ১৪ বন্দি নিহত ও ১৪ জন আহত হন।
এর কয়েক দিন পরই উত্তরাঞ্চলের এসমেরালদাস শহরের আরেকটি কারাগারে দাঙ্গায় প্রাণ যায় আরও ১৭ জনের।
এমন একের পর এক সহিংসতা ইঙ্গিত দিচ্ছে—দেশটির কারাগারগুলো এখন শুধু অপরাধীদের আটককেন্দ্র নয়, বরং সংঘবদ্ধ অপরাধের নতুন ঘাঁটিতে পরিণত হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইকুয়েডরের কারাগারগুলোতে বন্দিদের সংখ্যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে যখন প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ হারায়, তখন সামান্য উত্তেজনাই রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে।
মাচালার সর্বশেষ দাঙ্গাটি তাই শুধু একটি “কারাগার ঘটনা” নয়—এটি ইকুয়েডরের গভীর সামাজিক ও নিরাপত্তা সংকটের প্রতিচ্ছবি, যেখানে বন্দিদের প্রাণ যেন সংখ্যার হিসাবেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে।

