ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বলছে, মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সুযোগ এখন অত্যন্ত ক্ষীণ। সংস্থাটি মনে করে, তিনি যত দিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ধরে রাখবেন, তত দিন দলটির রাজনৈতিক ময়দানে ফিরে আসার সম্ভাবনাও কমে থাকবে।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সেদিনই তিনি ভারত গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে রাজনৈতিক ও বিভিন্ন মহলের দাবির মুখে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম সাময়িক নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর নির্বাচন কমিশন দলের নিবন্ধন স্থগিত করে। গত সপ্তাহে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও জানান, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না।
গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর আইসিজি এক প্রতিক্রিয়া জানায়। সংস্থাটির সিনিয়র কনসালট্যান্ট থমাস কিন বলেন, রায়টি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে সমর্থন পাবে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে যে নৃশংসতা চালানো হয়েছিল, তাতে তাঁর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহের সুযোগ খুবই কম।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের এক তদন্তে দেখা গেছে, সে সময়ের দমন-পীড়নে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়। তদন্তে বলা হয়, এসব অভিযান রাজনৈতিক নেতৃত্বের জ্ঞাতসারে, নির্দেশনায় এবং সমন্বয়ে পরিচালিত হয়েছিল। প্রতিবেদনে বিশেষভাবে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দায়ী করা হয়। ট্রাইব্যুনালের বিচারেও নতুন প্রমাণ উঠে এসেছে—যার মধ্যে ছিল দমন-পীড়ন নিয়ে কথোপকথনের রেকর্ডিং এবং সাবেক পুলিশপ্রধানের সাক্ষ্য।
তবে থমাস কিন মনে করেন, বিচারপ্রক্রিয়াটি পুরোপুরি সমালোচনামুক্ত ছিল না। তিনি বলেন, অনুপস্থিতিতে বিচার সবসময় বিতর্ক তৈরি করে। দ্রুতগতিতে বিচার সম্পন্ন হওয়া এবং আসামিপক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ উপস্থাপনের সুযোগ সীমিত থাকা—এসব বিষয় বিচারপ্রক্রিয়ার ন্যায়সংগততা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এসব সমালোচনা বাংলাদেশের অপরাধবিচার ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জও তুলে ধরে।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারও ব্যাপক সংস্কার শুরু করতে পারেনি।
তবু তাঁর মতে, এসব সমালোচনাকে শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ড বা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বকে খাটো করে দেখার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।
থমাস কিন বলেন, রায়ের রাজনৈতিক প্রভাব গভীর। শেখ হাসিনার দেশে রাজনৈতিকভাবে ফেরার সম্ভাবনা এখন খুব কম। আর তিনি যত দিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ছাড়তে অস্বীকৃতি জানাবেন, তত দিন দলটিরও রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রত্যাবর্তন কঠিন হয়ে থাকবে।
আসন্ন পরিস্থিতি নিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশটি ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে সামনে নিয়ে এগোচ্ছে। এরমধ্যে ধারাবাহিক বোমা হামলা এবং আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘লকডাউন’ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। তাঁর পরামর্শ—আওয়ামী লীগের উচিত সহিংসতা থেকে সরে আসা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত দলটির সমর্থকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত দমন-পীড়ন এড়িয়ে চলা।

