যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিদলীয় কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মে মাসের ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে চীন তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা পরীক্ষা ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচার করেছে। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) প্রকাশিত ইউএস-চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড সিকিউরিটি রিভিউ কমিশনের রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে। কমিশনটি যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল—ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—এর সদস্য নিয়ে গঠিত।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, চারদিনের ওই সংঘাতে চীনের আধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থাগুলো প্রথমবারের মতো সক্রিয় যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে এইচকিউ-৯ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, পিএল-১৫ আকাশ-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র, এবং জে-১০ যুদ্ধবিমান। কমিশন এগুলোকে ‘বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রের পরীক্ষা’ হিসেবে দেখেছে।
সংঘাতের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই চীন পাকিস্তানকে ৪০টি জে-৩৫ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান, কেজে-৫০০ বিমান এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রির প্রস্তাব দেয়। পাশাপাশি চীনা দূতাবাসগুলো তাদের অস্ত্র ব্যবস্থার সাফল্য প্রচার করে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করে। তবে কমিশন উল্লেখ করেছে, সংঘাতটিকে যদি ‘প্রক্সি ওয়ার’ হিসেবে দেখা হয়, চীনের ভূমিকার মাত্রা অতিরিক্তভাবে বড় হয়ে দেখানো হতে পারে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের পর চীন ফরাসি রাফাল যুদ্ধবিমানকে বদনাম করতে একটি বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালায়। ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে বলা হয়েছে, চীন ভুয়া সামাজিকমাধ্যম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এআই-তৈরি ছবি ও ভিডিও গেমের দৃশ্য প্রচার করে দাবি করে, রাফাল ধ্বংস হয়ে ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। এই প্রচারণার মাধ্যমে চীন ইন্দোনেশিয়াকে রাফাল ক্রয় থেকে বিরত রাখে।
চীন অবশ্য পুরো রিপোর্টকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, “এই কমিশন সবসময় চীনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট। তাদের কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। রিপোর্টটিই বিভ্রান্তিমূলক তথ্য।”
পটভূমি হিসেবে বলা যায়, ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হলে উত্তেজনা বাড়ে। ভারত হামলার সঙ্গে পাকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠীর সংযোগ পায় এবং ৭ মে অপারেশন সিদূর শুরু করে। এর জবাবে পাকিস্তান মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায়, যা ভারত প্রতিহত করে। পরে পাকিস্তানের একাধিক বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে পাল্টা আঘাত হানে ভারত। ১০ মে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায়, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে সংঘাত শেষ হয়।

